সম্পাদকীয়

  ২১ জানুয়ারি, ২০২১

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর কথা ভাবতে হবে

করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তবে সেই স্থবিরতা দেশের কোনো কিছুকেই পুরোপুরি স্থবির করতে পারেনি। অনেক দেশের চেয়ে আমাদের অবস্থা অনেকটাই ভালো, এ কথা বলতে কোনো দ্বিধা নেই। সম্ভবত তা এ দেশের মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে। শুরুতে শঙ্কা ছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু তা হয়নি। প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া আমাদের শক্তিশালী অ্যামিউনিটি ও অ্যান্টিবডি গোটা জাতিকে এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেছে। এ যেন অনেকটা দেশি মুরগি ও ফার্মের মুরগির মতো। দেশি মুরগিরা খোলা আকাশে খোলা বাতাসে চলাচল করে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে এবং বাড়িয়েছে। ফার্মের মুরগির সে সুযোগ থাকে না। আর সে কারণেই সেখানে মাঝেমধ্যেই মড়ক লাগে আর হাজার হাজার মুরগির মৃত্যু ডেকে আনে। কিন্তু দেশি মুরগির ক্ষেত্রে তা কখনোই দেখা বা শোনা যায়নি। সুতরাং এই উদাহরণকে সামনে রেখে বলা যায়, প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পথ। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রাকৃতিক কারণে সে পথেই সংগ্রাম করে বাংলাদেশ টিকে আছে বিশ্ব মানচিত্রে। শুধু টিকে থাকাই নয়, অনেক দেশের কাছে সে এখন রোলমডেল হয়ে নিজের প্রকাশ ঘটিয়েছে।

করোনা মহামারির এক বছরের মাথায় এসে দেশের সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে, একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া। এ নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে সিদ্ধান্ত আসেনি এখনো। এদিকে দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। জরিপ বলছে, ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দ্রুত ক্লাসে ফিরতে চায়। তারা স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। আর ৭৬ শতাংশ অভিভাবক ও ৭৩ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও বলছেন একই কথা। পাশাপাশি ৫৮ শতাংশ শিক্ষক ও ৫২ শতাংশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সতর্কতার সঙ্গে স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে বলেছেন। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে চলা দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার সংখ্যা ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ। সুতরাং এ কার্যক্রমকে সফল বলা যাবে না। তথ্যমতে, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় ডিভাইসের অভাবে শিক্ষাবঞ্চিত হয়েছে। অনলাইন ক্লাস আকর্ষণীয় না হওয়ায় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করেনি।

বাস্তবতা বলছে, এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে আগামী প্রজন্মের সামনে চলার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে। জাতি মেধাহীন হয়ে পড়বে। যা কখনোই হতে দেওয়া যায় না। আমাদের বিকল্প পথের সন্ধান করতে হবে। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, করোনা আমাদের পাশেই অবস্থান করছে। আমাদের একটু অবহেলার কারণে যেকোনো সময় তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং সংক্রমণ রোধ, এ দুয়ের সমন্বয় করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনোক্রমেই সংক্রমণকে আমন্ত্রণ করে ঘরে তোলা যাবে না পাশাপাশি দেশ ও জাতিকে রক্ষার স্বার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সবার আগে সচেতন হতে হবে ছাত্র সমাজকে। তারা যদি কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তাহলেই হয়তো সম্ভব হতে পারে। কাজটা কঠিন নয়। তবে মানসিকভাবে তৈরি হওয়াটাই কঠিন। আশাকরি, ছাত্র সমাজ মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামবে, যদি সরকারের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিক্ষার্থী,ক্লাস,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close