সম্পাদকীয়

  ০৪ জুলাই, ২০১৯

অনিয়ন্ত্রিত রেল দুর্নীতির লাগাম টানা হোক

দুর্নীতি এখন বিলাসী জীবনযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ। সামাজিকভাবে না হলেও বাস্তবতায় এই অনুষঙ্গটি আজ অনেকটা ভালোবাসার রেশমি চাদরে জড়িয়ে আছে। যাকে আমরা আমাদের চিন্তা ও চেতনার বৃত্তে ধরে রেখেছি দীর্ঘকাল। লুটেরা পুঁজির অনৈতিক চরিত্র ধীরে ধীরে এই ভালোবাসাকে ক্রমেই বিকশিত করেছে। আজ যা সমাজের পরতে পরতে গোবরে পোকার মতো বাসা গড়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার মতো পরিষ্কার কোনো পথ যেন খোলা নেই। রক্ষকরা যখন ভক্ষকের ভূমিকায় ক্রিয়াশীল থাকে, তখন সে সমাজে এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়াটাও বোধহয় সম্ভব নয়। তবু চেষ্টা চলছে। দুর্নীতি এখন এমন একটা পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে এই অনুষঙ্গ ছেঁটে ফেলার জন্য ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের’ নীতি ঘোষণা করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও দুর্নীতিবাজদের চরিত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। পরিবর্তনের জন্য হয়তো আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

অসুখটা ক্রনিক। সারতে সময় লাগবে। যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। ওষুধে কাজ না হলে অস্ত্রোপচার। সম্ভবত সে পথেই চলছে সরকার। প্রথমে রোগী শনাক্ত, তারপর রোগ নির্ণয় এবং অতঃপর চিকিৎসা। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলেছে, রেলের পাতে পাতে দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছে এ সংস্থাটি। সংস্থার তথ্য মতে, রেলওয়ের ওয়ার্কশপ অকার্যকর রেখে আমদানির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়। বিভিন্ন কৌশলে হয় অনিয়ম ও দুর্নীতি। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণে, রেলের টিকিট বিক্রিতে কালোবাজারি, রেল বিভাগের শত শত একর ভূমি বেদখলসহ দশটি উৎস চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।

দুদক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়াগন, কোচ, লোকোমোটিভ, ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিএমইউ) ক্রয় এবং ডাবল লাইন, সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এ নিয়ে দুদক এ যাবৎ ১৩ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ফলে আমরা রোগ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। রোগীও চিহ্নিত করা গেছে। প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং এতেও যদি রোগ প্রশমিত না হয়, তাহলে প্রয়োজন পড়বে অস্ত্রোপচারের। আমরা সেই শুভদিনটির কামনায় প্রহর গুনছি। কেননা, দেশবাসী তাদের প্রাণপ্রিয় দেশটিকে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবেই দেখতে আগ্রহী।

প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্সের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আমরাও বলতে চাই, দুর্নীতি প্রশ্নে কোনো ক্ষমা নেই। বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণ করতে হলে সর্বাগ্রে দেশকে দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী সেদিকেই তার লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে চলেছেন। আর এ কাজে তিনি সফল হবেন—এ প্রত্যাশা নিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে দেশের কোটি কোটি মানুষ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রেল দুর্নীতি,সম্পাদকীয়,অনিয়ম
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close