নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শুভ জন্মদিন ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’

ফাইল ছবি

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ হিসেবে সুখ্যাত। বাংলা ছোটগল্প ও উপন্যাসের এক অবিস্মরণীয় স্রষ্টার নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়; যে নামটি শুনলেই অনেকের দেবদাস কিংবা শ্রীকান্তের কথা মনে পড়ে যায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দৈনন্দিন জীবনের অতি ছোটখাটো ঘটনাকেও অবিশ্বাস্য দক্ষতায় তুলে এনেছেন তার সাহিত্যে। ছোট বেদনাগুলোও তার জাদুহাতের ছোঁয়ায় অসম্ভব আবেগে মথিত হয়ে স্পর্শ করেছে পাঠকের হৃদয়। সে কারণেই তিনি আজও অসংখ্য বাঙালি পাঠকের হৃদয় জয় করে জীবিতই আছেন। আজ তার জন্মদিন। ১৮৭৬ সালের এই দিনে তিনি ভারতের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

পড়াশোনায় অমনোযোগী শরৎ ১৮৯৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন। এরপর তার সময় কাটত ভাগলপুরে আদমপুর ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে খেলাধুলা ও অভিনয় করে।

জীবিকার তাগিদে ১৯০৩ সালে তিনি চাকরি নেন রেলওয়ের অডিট অফিসে। সে চাকরিও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দুই বছর পর চাকরি চলে গেলে ১৯০৬ সালে বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস অ্যাকাউন্টস অফিসের ডেপুটি একজামিনার মণীন্দ্রনাথ মিত্রের সাহায্যে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে এই অফিসে চাকরি পান ও পরবর্তী ১০ বছর এই চাকরি করেন।

১৯১২ সালে শরৎচন্দ্র এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে এলে ‘যমুনা’ পত্রিকার সম্পাদক ফনীন্দ্রনাথ পাল তাকে পত্রিকার জন্য লেখা পাঠাতে অনুরোধ করেন। শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে ফিরে গিয়ে তাকে ‘রামের সুমতি’ গল্পটি লিখে পাঠান। মূলত এর পরই শুরু হয় তার সাহিত্যিক জীবন। একে একে প্রকাশিত হয় ‘বড়দিদি’, ‘বিরাজবৌ’, ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘পরিণীতা’, ‘দেবদাস’ ও ‘শ্রীকান্ত’-এর মতো কালজয়ী সব উপন্যাস। এসব বই-ই তাকে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকের মর্যাদা এনে দেয়।

উপন্যাসের জন্য বেশি জনপ্রিয় হলেও, শরৎচন্দ্র তার ছোটগল্পেও দেখিয়েছেন সমান মুনশিয়ানা। ছোটবেলায় বাংলা বইয়ে ‘মহেশ’ গল্প পড়ে চোখের জল ফেলেনি এমন ছাত্র কমই আছে। এছাড়াও ‘ছেলেধরা’, ‘হরিচরণ’ প্রভৃতি ছোটগল্পে তার তীক্ষ্ম হাস্যরস আর বুদ্ধিদীপ্ততা প্রকাশ পায়।

তবে, তার সবচেয়ে বড় সফলতা সম্ভবত সাহিত্যে নারী চরিত্রের যথার্থ প্রতিফলন। বাঙালি নারীর মনস্তত্বের অলিগলির ঠিকানা এতো বাস্তব আর বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে তার মতো আর কেউ দেখাতে পারেননি আজও। শরৎচন্দ্রের সাহিত্যকর্মকে ঘিরে ভারতীয় উপমহাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্র বিভিন্ন ভাষায় তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে ‘দেবদাস’ উপন্যাসটি বাংলা, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় আটটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।

তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক পান। এছাড়াও তিনি ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ‘ডিলিট’ উপাধি পান। তিনি ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close