পাঠান সোহাগ
প্রাণের বইমেলা
আঙুলের স্পর্শে বই পড়েন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা
২০০৮ সালের কথা। ‘মানুষ দৃষ্টিহীন বলেই অন্ধ নয়/মানুষ মূলত প্রজ্ঞাহীন বলেই অন্ধ’ এই স্লোগান নিয়েই যাত্রা শুরু করে স্পর্শ বেইল প্রকাশনী। পরের বছর ২০০৯ সালে পুরোপুরি কাজ শুরু করে প্রকাশনীটি। সেই থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বই প্রকাশ করছে ‘স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী’। এ বছর নতুন ১৪টিসহ সর্বমোট ৬১টি বই প্রকাশ করেছে এ প্রকাশনী।
গতকাল বুধবার স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর সামনে ছিল উৎসুক দর্শনার্থীর ভিড়। তারা শুনছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রিপা তাবাসুম ও জারিনা খানের কণ্ঠে শ্রুতিমধুর পাঠ। চোখে না দেখেও যে পড়াশুনা করা যায় তারাই জ্বলন্ত প্রমাণ। অনেকেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুনছিলেন।
এমন সময় দর্শনার্থী এমরান বলেন, বিশ্বাসই করা যাই না ওরা চোখে দেখে না। চেষ্ট করলে সবই সম্ভব। স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর প্রধান উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন বলেন, ‘কর্মজীবন শুরু হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ‘প্রচেষ্টা’ নামের একটি এনজিওতে কাজ করার সময়। সেই থেকে পথ চলা। এখনো কাজ করছি। প্রথম দিকে নিজের চেষ্টায় নিজের, টাকায় বই প্রকাশ করেছি। ব্রেইল মাধ্যমে বই প্রকাশ করতে অনেক খরচ। পরে আত্মীয়-স্বজন এ কাজে সাহায্য করেছেন। আমার এমন উৎসাহ দেখা কিছু দাতা সংস্থা এ গিয়ে এসেছে।’
গতকাল সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় আগতদের মধ্যে দর্শনার্থী, ক্রেতা, পাঠকের চেয়ে গণমাধ্যমের কর্মীই বেশি। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বই কেনার চেয়ে গল্প-আড্ডায় মেতেছেন বেশি। প্রকাশনী সংস্থার কর্মীরা বলেছেন, দর্শনার্থীরা এখনো ক্রেতা হিসেবে আসেননি।
গতকাল বুধবার মেলায় আসা নতুন বইয়ের মধ্যে গল্প ২৩টি, উপন্যাস ৪১টি, প্রবন্ধ সাতটি, কবিতা ৬৪টি, ছড়া তিনটি, শিশুসাহিত্য একটি, জীবনী তিনটি, ভ্রমণ কাহিনি তিনটি, ইতিহাস তিনটি, চিকিৎসা-স্বাস্থ্য একটি, মুক্তিযুদ্ধের একটি, বিজ্ঞান দুটি, সায়েন্স ফিকশন ছয়টি এবং অন্যান্য ১৫টি বইসহ মোট ১৯০টি নতুন বই রয়েছে। গত সাত দিনে মেলায় নতুন ৭২৯ টি বই এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার অষ্টম দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে এ বি এম হবিবুল্লাহ, মমতাজুর রহমান তরফদার চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আকবর আলি খান এবং মেসবাহ কামাল।
পিডিএসও/তাজ