দীপংকর গৌতম

  ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯

গণহত্যার ইশতেহার

যে রাতটা ক্লান্তি নিয়ে ফিরে এসেছিল,

যে রাতের ছবি আমি তুলোট কাগজে জলরঙে

মিহিন সেলাইয়ের মতো এঁকেছিলামÑ সে রাত ছিল

আমার অপাপবিদ্ধ জীবনে সংগ্রামমুখর ক্লান্ত দিনের

আদর্শলিপি। আমার প্রপিতামহীর একাদশীর শেষে

বিষণœœ রেখার মতো জেগে থাকা করপুট,

আর জল ধোয়া অরগান্ডি শাড়ির মতো

কোঁচকানো চামড়ায় ভর করে আসা

ঘুমের বিশদ পা-ুলিপি

রাখালিয়া বাঁশির মতো সরল,

অলস পলির মায়ায় ঢাকা পেলব

নিষ্প্রভ বাতির মুগ্ধতা জড়ানো কোমল,

কপিলার তিলের মতো আদুরে

সরব ঘুমের সে পা পা-ুলিপি আসতে আসতে

নয় মাস, তত দিনে যারা ঘুমিয়েছে, তাদের টেনেহিঁচড়ে ব্যারাকে নিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছিল।

রাস্তায়, মাঠে, ঘাটে সবখানে গুলি ফুটিয়ে তাদের ঘুম পাড়াচ্ছিল রিকয়েললেস রাইফেলের বৃষ্টির মতো গুলি ফুটিয়ে। হিংসার ঘৃণ্য আগুনে পুড়ছিল মন্দির উপাসনালয়ের মন্দ্রিত নীরবতা। স্মৃতি হাতড়াতে কিংবা একগ্লাস জলের পিয়াস, প্রিয় সন্তান বা বৃক্ষগুল্মের এই সবুজ জনপদকে যারা দেখতে চেয়েছে, একবার তাদের চোখ কাঁটা চামচ বা বেয়নেট দিয়ে তুলে ফেলা হয়েছিল। সেসব হিংস্র চোখের পাশবিক আগুনে পুড়ছিল অযুত প্রাণ। আমি সেই ঘুমদিনের উত্তরাধিকার নিয়ে বলতে এসেছি, বিচার চাইতে এসেছি তাদের, যারা আমাদের প্রাণের গহিনে পুঁতে দিয়েছে আমাদের স্বজনের অস্থি-করোটি। সে কি বীভৎসতা। ঘাসময় অন্ধকার। পাখিদের কুজন, প্রস্ফুটিত ফুলের গন্ধে ছড়ানো আতরের মতো হত্যাকা-। কার্তিকের পড়ে থাকা ধানের মতো লাশ। আহা চারদিকে শকুনের উল্লাস। মানুষের স্বাভাবিক ঘুম কেড়ে তার স্বপ্ন সাম্য লুট করে যারা তৈরি করতে চেয়েছিল ঘুমের পা-ুলিপি। আমি তাদের নাম গণহত্যার ইশতেহারে লিখে দিয়ে যাচ্ছি। সেই সব বিষরাত্রির খলনায়কদের মৃত্যু অবধি শাস্তি জারি করা হোক। আমাদের উর্বর মৃত্তিকা, ফসলের মাঠ, পাখি, ফুল আর বিশুদ্ধ জলের অভিশাপ কাল মহাকাল জুড়ে তাদের খুবলে খাবে জিউসের ঈগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close