আদালত প্রতিবেদক

  ২৬ জুলাই, ২০১৯

আদালতের মন্তব্য

আগে মশার ওষুধের ঝাঁজ পেতাম, এখন গন্ধ পাই না

চলতি বছরে মশা নিধনের কার্যক্রম নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলেন, গত বছর ওষুধ ছিটানোর পর ঘরেও তার ঝাঁজ পেতাম। এবার গন্ধও পাওয়া যায় না। জনগণের ধারণা এবারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ মন্তব্য করেন।

আদালতে ঢাকা উত্তর সিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু ও দক্ষিণ সিটির পক্ষে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

এর আগে আদালতের তলবে হাজির হন ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন। শুনানিতে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে বলেন, এ বছর অ্যালার্মিং সিচুয়েশন কেন হলো? এক্ষেত্রে কী সমস্যা, তা কি চিহ্নিত করেছেন?

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, চিন্তা করতে হবে। নিঃসন্দেহে বিষয়টি সবার হেলথ কনসার্ন। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনই বলুক, সেটাই ভালো হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমার এই সিটি করপোরেশনে ১ কোটির বেশি লোক। আর ১০টি জোনে ৭৫টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমে জনবল মাত্র ৪২৯।

তখন আদালত বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এত কেন? তিনি বলেন, এটা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ক্লাইমেট সেনসেটিভ ডিজিজ। আর এ বছর আমাদের দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ও উষ্ণতা ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর ভয়াবহ প্রভাব চলছে। সব দেশেই তো ডেঙ্গু আছে। এ সময় তিনি কয়েকটি দেশের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা তুলে ধরেন।

আদালত বলেন, ওষুধ কার্যকর হচ্ছে না কেন? গত বছর ওষুধ ছিটালে ঘরেও তার ঝাঁজ পেতাম। এবার গন্ধও পাওয়া যায় না। জনগণের ধারণা এবারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না। টিভিতে দেখলাম সড়কমন্ত্রী বললেন, এবারের ওষুধ কাজ করছে না। এর আগে তো কেউ স্বীকারই করেনি। তখন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমরা যখনই ওষুধ আনি তখনই সরকারি দুটি ল্যাবে টেস্ট করে পজেটিভ সার্টিফিকেট পেলেই ব্যবহার করি। অর্থাৎ, ল্যাব পরীক্ষায় সন্তোষজনক বললে ব্যবহার করি।

তখন আদালত বলেন, যখন দেখলেন ওষুধ কাজ করছে না তখন অন্য জায়গায় দ্রুত টেস্ট করবেন না। এসব কী আমাদের বলে দিতে হবে? হোয়াট ইজ দ্য প্রবলেম? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশের স্বাস্থ্য দেখবে। এগুলো আমরা দেখতে চাই না। অবস্থা যে রকম যাচ্ছে এটা কেবল সিটি করপোরেশনের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। বিষয়টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেখতে হবে। জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখন তৃতীয় ল্যাবে টেস্ট করতে দিয়েছি। কৃষি গবেষণাতে।

এরপর উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, আমরা পুরো ওষুধটাই চেঞ্জ করব। এজন্য একটি কারিগরি কমিটি করেছি। সমস্যা হচ্ছে, পিপিপির (পাবলিক প্রাইভেট প্রকিউরমেন্ট) মাধ্যমে এটা করতে হয়। সেখানে অনেক সময় লাগে। তবে ডিপিএমের মাধ্যমে কিনলে তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব।

এক পর্যায়ে আদালত বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ওষুধ আনবেন। আমরা আদেশ দেব। আমরা ওষুধ চাই। কী প্রক্রিয়ায় আনবেন সেটা হলফনামা আকারে আপনার আইনজীবীকে দিতে বলেন। একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নিতে ডিএসসিসি ও ডিএসসিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত সোমবারের মধ্যে এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ আদালতকে জানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। সে অনুসারে গত সোমবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু প্রতিবেদন দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি আদালত। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার এই দুই কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন আদালত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close