রাজশাহী ব্যুরো

  ২০ মে, ২০১৯

আত্মহত্যার আগে চিরকুটে যা লিখেছিল বর্ষা

রাজশাহীর মোহনপুরে যৌন নির্যাতনের বিচার না পেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা আক্তার (১৪) গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বিলপাড়া গ্রামের নিজ শয়নকক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট রেখে গেছে স্কুলছাত্রী বর্ষা। সেখানে সে লিখেছে, ‘প্রিয় মা-বাবা, প্রথমেই তোমাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমি তোমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি, অনেক আদর, অনেক ভালোবাসা। কিন্তু একটা মেয়ের কাছে তার মানসম্মানটাই সবচেয়ে বড়। আমি আমার লজ্জার কথা সবাইকে বলতে বলতে নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি। প্রতিদিন পরপুরুষের কাছে এসব বলতে বলতে। আমি আর পারছি না। অপরাধীকে শাস্তি দিলেই তো আমার মানসম্মান ফেরত পাব না। আমাকে ক্ষমা করো।’

বর্ষার পরিবার ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের আবদুল মান্নান চাঁদের মেয়ে বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। সহপাঠী সোনিয়ার সঙ্গে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া-আসার পথে এলাকার কাজলের ছেলে মুকুল (১৮) তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিত। এতে রাজি না হওয়ায় সে বর্ষার বান্ধবী সোনিয়ার মাধ্যমে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। গত ২৩ এপ্রিল প্রাইভেট শেষে বর্ষাকে নিয়ে খানপুর বাগবাজার এলাকায় যায় বান্ধবী সোনিয়া। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে বর্ষা। তখন লোকজন তাকে উদ্ধার করে। তবে মুকুল লোকজনের কাছ থেকে বর্ষাকে শহরে নিয়ে যেতে চায়। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন বর্ষাকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে প্রথমে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে খানপুর বাগবাজার এলাকায় কেন বা কীভাবে বর্ষা অচেতন হয়, তা জানা যায়নি।

এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ২৪ এপ্রিল মুকুলকে আটক করে। তবে ওইদিন রাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই দিন আটক করা হয় মুকুলের সহযোগী শিবপুর গ্রামের শফিকের ছেলে নাঈমকে। তাকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিচার না পেয়ে ও থানায় মামলা করতে না পেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে বর্ষা। সন্ধ্যায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ। বর্ষাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করায় অভিযুক্ত মুকুল, সোনিয়া ও নাঈমকে গ্রেফতার করা হয়। গত শুক্রবার বিকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

বর্ষার বাবা আবদুল মান্নান জানান, তার মেয়েকে সোনিয়ার মাধ্যমে অপহরণ করে শহরে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে মুকুল। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। আপসের কথা বলে আসামিদের আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে। এতেই ক্ষোভে-অভিমানে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বর্ষাকে আজ মরতে হতো না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘মেয়েটি অসুস্থ থাকায় তাকে আমি নিজেই রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম আগে সে সুস্থ হোক পরে মামলার বিষয় দেখা যাবে।’ ওসি আরো বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে মামলার পর তিনজনকেই গ্রেফতার করা হয়। বর্ষার ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে বর্ষা ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না। আপাতত আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ওই তিনজনের নামে মামলা হয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close