নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ মার্চ, ২০১৯

ইতিহাস বিকৃতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ের সম্পাদকের ক্ষমা প্রার্থনা

ইতিহাস ‘বিকৃতির’ দায় নিয়ে উচ্চ আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ের সম্পাদক শুভঙ্কর সাহা। আদালতের তলবের জবাব দিতে গতকাল মঙ্গলবার হাজির হয়ে ‘বিকৃতির’ দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেও বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আজিজ উল্লাহ ইমন ও শুভঙ্কর সাহার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যোবায়ের রহমান।

আইনজীবী আজিজ উল্লাহ ইমন পরে সাংবাদিকদের বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যন্তরীণ নোটিস দিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সব কপি তুলে নিয়েছে। আর নতুনভাবে প্রকাশিত বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালত ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপিয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি ছাপানোর ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহাকে তলব করে। সেই সঙ্গে ইতিহাস বিকৃতি ‘অমার্জনীয় অপরাধ’ মন্তব্য করে আদালত বইটির সব পুরনো কপি বাজার থেকে তুলে নিতে বলেছিলেন। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টে হাজির হয়ে ইতিহাস বিকৃতির দায় স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান শুভঙ্কর সাহা।

তিনি আদালতকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বই প্রকাশে একটি টিম দায়িত্বে ছিলেন। আমরা বইয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান, ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাÑ এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রিলেটেড বঙ্গবন্ধুর কোনো ছবি না পাওয়ায় বইয়ে বঙ্গবন্ধুর কোনো ছবি দেওয়া হয়নি। এইজন্য আমি আদালতের কাছে পুরো টিমের পক্ষে ক্ষমা চাচ্ছি। এ সময় আদালত বলেন, ‘আইয়ুব খান, মোনায়েম খানকে বইতে হাইলাইট করলেন অথচ বঙ্গবন্ধুর একটা ছবিও পেলেন না?’ জবাবে শুভঙ্কর বলেন, ‘বইতে আইয়ুব খানকে স্বৈরাচার হিসেবেই অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছে।’

এ পর্যায়ে তিনি আবারও দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে রিটকারী আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ক্ষমা চেয়ে ইতিহাস বিকৃতির দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।’

এরপর আদালত প্রকাশিত ওই বইগুলো কী করা হয়েছে, তা হলফনামা আকারে বিস্তারিত জানানোর নির্দেশ দিয়ে ৯ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখে।

জানা গেছে আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে ২০১৩ সালে এ বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটি করা হয় সে সময়। বইটি প্রকাশের আগে সম্পাদনার দায়িত্বে বেশ কয়েকবার রদবদল হয়। সর্বশেষ এ দায়িত্বে ছিলেন ব্যাংকের তখনকার নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা।

পান্ডুলিপি চূড়ান্ত করার পর ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’। ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ অনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close