নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

ডিএমপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

পৌনে দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত মেগাসিটি ঢাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৩৪ হাজার পুলিশ। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এই মেগাসিটিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। এখানে কর্তৃব্যরত পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত ডিউটি পালন করতে হয়। অথচ চিকিৎসাসেবা ও আবাসিক সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। মেগাসিটিতে বসবাসের জন্য পুলিশের বিশেষ করে কনস্টেবল পর্যায়ের সদস্যদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করায়, পর্যাপ্ত পুলিশি সেবা পেতে জনগণও বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন অনেকে।

ডিএমপির সদস্যদের এ ধরনের নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে আজ শনিবার উদযাপিত হচ্ছে ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে আজ রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে এই নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ১২টি থানা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যাত্রা হয়। নাগরিক জীবনে পুলিশের আধুনিক সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ডিএমপি। ধীরে ধীরে মেট্রোপলিটন পুলিশের এলাকা বাড়তে থাকে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে থানার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ২০০৬ সালে ডিএমপির থানার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩টিতে। এর লোকবল ছিল ২৩ হাজার ৪০০। বর্তমানে ডিএমপির ৪৯টি থানায় সাড়ে ৩৪ হাজার পুলিশ কর্মরত রয়েছে। একজন কমিশনার, ছয়জন অতিরিক্ত কমিশনার, ১১ জন যুগ্ম কমিশনার, ৪২ জন উপকমিশনার ও ৭৩ জন অতিরিক্ত উপকমিশনার কর্মরত রয়েছেন। ডিএমপির মোট পুলিশ সদস্যের ৯০ ভাগই কনস্টেবল। প্রায় ৩০ হাজার পুলিশ কনস্টেবলের প্রায় সবাইকে দুর্ভোগ আর অনিশ্চিয়তার মধ্য দিয়ে ডিএমপিতে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

ডিএমপিতে চলছে তীব্র আবাসিক সংকট। মাত্র ২ দশমিক ৬২ ভাগ পুলিশ সদস্য আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে। ছয় হাজার কনস্টেবল রাজারবাগ পুলিশ লাইন ব্যারাক ও বিভিন্ন থানা ব্যারাকে থাকে। বাকি ২৪ হাজার কনস্টেবল ভাড়া বাসায় থাকে। আবাসিক সুবিধা না থাকায় তাদেরকে বেতনের একটি বড় অংশ দিয়ে ভাড়ায় থাকতে হচ্ছে। নিজ থানা এলাকায় অনেক সময় বাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ায় নগরীর উপকণ্ঠে যেসব স্থানে ভাড়া কম সেখানে বাড়ি নিয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন তার কর্মস্থলে যেতে সময় নষ্ট হচ্ছে।

ডিএমপিতে কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত এই সাড়ে ৩৪ হাজার পুলিশের যাতায়াত ও ডিউটির জন্য মাত্র সাড়ে ৫০০ গাড়ি রয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকই ২০ বছরের বেশি পুরানো। পুলিশ কর্মকর্তাদের (কমিশনার থেকে সহকারী কমিশনার) জন্য যানবাহন থাকলেও থানায় ডিউটি করার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। বেশি পুরনো ও ভাঙাচোরা গাড়ি দিয়ে টহল পুলিশকে ডিউটি করতে হয়। এই ভাঙ্গাচোরা গাড়ি দেওয়া হলেও তার সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। এ কারণে টহল পুলিশের ডিউটির জন্য পুলিশকেই বেসরকারি পর্যায়ের গাড়ি রিকুইজিশন করতে হয়। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, পুলিশ গাড়ি রিকুইজিশনের নীতিমালা না মেনে ব্যক্তিগত, রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজের শিক্ষক পরিবহনের গাড়ি রিকুইজিশন করে। এ গাড়ি রিকুইজিশন করতে গিয়ে পুলিশকে গাড়ি মালিকদের মুখোমুখি অবস্থায় নিয়ে যায়। এতে করে পুলিশ সম্পর্কে গাড়ির মালিকদের কাছে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে। পদস্থ কর্মকর্তারা তাদের পরিবারের চিকিৎসার জন্য বেসরকারিভাবে নিজ খরচে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করলেও কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পান না। এদের পরিবারের চিকিৎসাসেবার জন্য নির্ভর করতে হয় রাজারবাগ পুলিশ কেন্দ্রীয় হাসপাতালের ওপর।

ডিএমপি সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে জনগণের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা ও নির্ভরতার মূর্ত প্রতীক হিসেবে শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ, মহিলা ও অসহায়দের হয়রানি, নির্যাতন ও অপরাধের শিকার হতে রক্ষা দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পুলিশের সেবার পাশাপাশি অপরাধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রমকে গতিশীল ও কার্যকর করতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্য নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশের পরও নানাভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। ভুক্তভোগীরা থানায় গেলে সহযোগিতা না করে, উল্টো নাজেহাল করার অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রতি বছর ডিএমপির বিরুদ্ধে নানা অপরাধে লিখিত অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist