তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি

  ২২ আগস্ট, ২০১৯

তানোরে পানি ভরা খালে পুনঃখননের তোড়জোড়

বর্ষার পানিতে ভরে আছে রাজশাহীর তানোরে কাঁসার দীঘি খাল। এর মধ্যেই পাড় থেকে এসকেভেটর দিয়ে চলছে খাল খনন কাজ। সেই মাটি আবার ফেলা হচ্ছে পাশের ফসলি জমিতে। এতে কাজে সাফল্য ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে দেখা দিয়েছে গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। এদিকে কৃষকের জমিতে ফেলার প্রতিবাদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এলাকার শতাধিক কৃষক। তারপরেও খননকাজ অব্যাহত রেখেছেন ঠিকাদার।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) খনন করা কাঁসার দীঘি খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। খালের সাড়ে চার কিলোমিটার অংশের পুনঃখননের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। এই কাজ পায় নাটোরের ঠিকাদার মোল্লা সরওয়ার মোর্শেদ (মুক্ত)। কিন্তু ওই ঠিকাদার এই কাজটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরেক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। কাগজে-কলমে কাজটি ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২৫ জুন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আজ অবধি কাজ শেষ হয়নি।

এদিকে কৃষকের জমিতে মাটি ফেলার প্রতিবাদে ইউএনওকে অভিযোগ দেওয়ার পরও খনন অব্যাহত রেখেছে ঠিকাদার। এ নিয়ে এলাকার কৃষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মজিদ বলেন, ‘খালের দুই পাশে থাকা আমার ১২ বিঘা জমির ওপর মাটি ফেলা হয়েছে। ফলে ওই জমিতে আগামী দিনে আর চাষাবাদ করা যাবে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘হয়তো কোনো আর্থিক সুবিধা পেতে কৃষকদের ক্ষতি করে এভাবে তাড়াহুড়া করে ভরা খাল খনন করছে কর্তৃপক্ষ।’

বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কাঁসার দীঘি খালের তানোর পৌর এলাকায় ২০০৮ সালে খনন করে বিএমডিএ। এর পর ২০১০ সালে খালের দুই ধারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়। আমাদের খনন করা খালে আবারো খননকাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের আলাদা ডিপার্টমেন্ট, আমাদের আলাদা। তাদের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে আবাদি জমিতে মাটি ফেলার কারণে অনেক কৃষক আমার কাছে ফোন করছে। এখানে আমারও তো কিছুই করার নেই।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তানোর পৌর এলাকায় দুটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে পানি থাকা অবস্থায় খাল খননের কাজ চলছে। আর খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে খালের দুই পাশে থাকা কৃষকের জমিতে। খালটির প্রস্থ চার ফুটের মতো হলেও খনন করা হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। খালের দুই পাশে রয়েছে অল্প বয়সী বিএমডির রোপণ করা নানা প্রজাতির গাছ। সেসব গাছ বিক্রির জন্য মাঝখানের ছাল তুলে লাল কালি দিয়ে নম্বর করা হয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, খালের খনন করা মাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর ফেলায় তা চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। অনেকের পুরো জমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে এলাকার কৃষকরা এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

ইউএনও নাসরিন বানু বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, জমির ওপরে যে মাটি পড়বে তা পরে সরিয়ে ফেলা হবে।’

পাউবো রাজশাহী অফিসের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আসিফ আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালটি গভীর নয়। তাই ঠিকাদারের মাধ্যমে খালটি পুনঃখননের কাজ শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকাদার না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখনো কোনো বিল দেওয়া হয়নি। খালটি খনন হলে এলাকার কৃষকদের চাষাবাদে আরো বেশি সুবিধা হবে।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে কাজের ঠিকাদারি পাওয়া প্রথম ঠিকাদার মোল্লা সরওয়ার মোর্শেদ (মুক্ত)-এর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি। খনন কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুর ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে গতকাল বুধবার প্রথমে স্থানীয়ভাবে, পারে প্রতিদিনের সংবাদ অফিস থেকে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close