এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ১২ আগস্ট, ২০২০

রাজশাহী ওয়াসার ই-সেবা চালু হয়নি ৩ বছরেও

সরকারের রাজস্ব বকেয়া বাড়ছে

অনলাইনে বিল পরিশোধের জন্য ই-সেবা চালুর তিন বছরেও আলোর মুখ দেখেনি রাজশাহী ওয়াসা। এছাড়াও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিল পরিশোধের সুযোগ থাকার কথা বলা হলেও রয়েছে সার্ভার সমস্যা। এ অবস্থায় একটি বড় অংশের বিল বাকি থাকায় সরকারের রাজস্ব বকেয়া বাড়ছে। এদিকে বর্তমান করোনা সংকটকালে ই-সেবা নাগরিকদের একদিকে যেমন সময় বাঁচাচ্ছে, অন্যদিকে ঝামেলা কম হচ্ছে। ফলে সব প্রতিষ্ঠান যখন অনলাইন ভিত্তিক হয়ে উঠেছে, এমন সময়ে রাজশাহী ওয়াসার কথিত ই-সেবা নাগরিকদের টানতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল সংকট থাকার পাশাপাশি করোনার কারণে আমাদের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তবে চলতি বছরই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

জানা গেছে, রাজশাহী ওয়াসা ২০১৭ সালে অনলাইনে বিল পরিশোধের সেবা শুরু করেছে। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা গেছে, ওয়াসার ওয়েবসাইট সার্ভারেই সমস্যা। ফলে ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করার সুযোগটিও গ্রাহকরা পাচ্ছেন না। রাজশাহী ওয়াসার রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে গত বছর অনলাইনে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার গ্রাহক বিল পরিশোধ করেছেন। অর্থাৎ অনলাইন ব্যবহার করে মাত্র ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ গ্রাহক বিল পরিশোধ করেছে। আর অনলাইন ছাড়া ব্যাংকে গিয়ে বিল দিয়েছেন ৯২ দশমিক ২২ ভাগ গ্রাহক। রাজশাহী ওয়াসা ২০১৭ সাল থেকে জি-পে, রূপালী ব্যাংক, শিওর ক্যাশসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিল গ্রহণ করেছে। তবে চলতি বছর সার্ভার নষ্ট থাকায় অনলাইন বিল তৈরি করা হয়নি।

রাজশাহী মহানগরীর ডাশপুকুর ব্যাংক কলোনি এলাকার সৌরভ শনিবার সকালে প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ২০১৮ সালের শেষের দিকে কয়েক মাস অনলাইনের মাধ্যমে বিল দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। ফলে হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়াও সময়ের অপচয় থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ সুযোগ বন্ধ থাকায় বিলও পরিশোধ করা হচ্ছে না। এছাড়াও করোনার সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষায় খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আর বাইরে যাই না। এ সময় তিনি অনলাইনের মাধ্যমে পুনরায় বিল পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টির দাবি করেছেন। মহানগরীর সাহেববাজার এলাকার সজিব বলেন, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি ওয়াসার বিল দিতে সাহেববাজারের একটি ব্যাংকে গিয়েছিলেন। সেখানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে ওই দিন বিল দিতে পারেননি। পরে পরিচিত একজনের কাছে জানতে পারেন অনলাইনে বিল দেওয়ার সুযোগ আছে। তবে কিছুটা সংশয় থাকলেও সেসময় তিনি অনলাইনে বিল পরিশোধ করতে সফল হয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি অনলাইনেই বিল পরিশোধ করতেন। কিন্তু চলতি বছর তিনি অনলাইনের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে তিনি অনলাইনে বিল পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টিসহ জনগণের সুবিধার্থে অনলাইন মাধ্যমটি আরো সহজ করার দাবি করেছেন। যেন ভোগান্তি ছাড়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের মতো এখানেও খুব সহজে গ্রাহকরা আকৃষ্ট হন। সাগরপাড়া এলাকার মোতাহার আলী জানান, তিনি এর আগে অনলাইনের মাধ্যমে বকেয়া বিল পরিশোধ করলেও এখন পারছেন না। ফলে বর্তমান করোনা মহামারির সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে অফিসে যেতে রাজি নন। তাই তিনি বিল দিচ্ছেন না। তিনি অনলাইনের মাধ্যমে বিল পরিশোধের সুযোগ খুলে দেওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সহজতর সিস্টেমেরও দাবি করেছেন।

এদিকে অনলাইনে বিল দেওয়ার জন্য রাজশাহী ওয়াসার ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনলাইন বিল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেখানে লাল কালি দিয়ে লেখা আছে ‘অনলাইন বিল পরিশোধ প্রক্রিয়াধীন’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী ওয়াসার রাজস্ব কর্মকর্তা মেহদী হাসান বলেন, ‘আমাদের অনলাইন বিল খুব কম হয়। আমাদের তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে বিল পরিশোধ করার সুযোগ আছে। তবে চলতি বছর সার্ভারের সমস্যার কারণে অনলাইন বিল তৈরি করা হয়নি। তবে এবার বিকাশের সঙ্গে গত ৭ দিন আগে চুক্তি হয়েছে। এখন ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট খোলা শেষ হলেই এটি আরো কার্যকর হবে।’ ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান আবদুল হামিদ দাবি করে বলেন, ‘ওয়াসা এখন পুরোপুরি অনলাইন বিলিং সিস্টেম চালু করেছে। সম্প্রতি বিকাশ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তবে করোনার কারণে আমাদের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। এছাড়া আমাদের লোকবলেরও সংকট আছে। আগামীতে গ্রাহকদের অনলাইনে বিল দেওয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close