নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার

জনসচেতনতার উদ্যোগ জ্বালানি বিভাগের

গ্যাস সংকটের কারণে আবাসিকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহক। এদিকে, সিলিন্ডারের মান পরীক্ষা করার বিষয়েও নেই কোনো নীতিমালা বা জনসচেতনতা। ফলে একের পর এক এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জাহাঙ্গীর টাওয়ারের পেছনের গলিতে একটি টঙ দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে জাহাঙ্গীর টাওয়ারের পেছনের অংশের প্রথম ও দ্বিতীয়তলার এসিতে আগুন ধরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ভবনটির দ্বিতীয়তলা পুড়ে যায়।

এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এলপি গ্যাস উচ্চ ক্ষমতায় চাপ দিয়ে সংকুচিত করে বোতলে ভরা হয়। কোনো কারণে লিকেজ বা চুলা খোলা থাকলে সেখান দিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস বের হলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। চার বছরে এলপি গ্যাস থেকে ৪৭৬টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১৮৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে ৭৯টি, ২০১৬ সালে ১৩১টি এবং ২০১৫ সালে ৮০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস কেবলমাত্র তাদের নির্বাপণ ব্যবস্থার মধ্যে থাকা ঘটনার রেকর্ড রাখে। এর বাইরেও এলপি গ্যাস গ্রাহকরা অগ্নিকান্ডের শিকার হন। তবে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটলে তার তদন্ত হয় না। হিসাবও কেউ রাখে না।

এই অবস্থায় সিলিন্ডার ব্যবহারে এবার জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। তারই অংশ হিসেবে কিছু নির্দেশনাও জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের সময় অসতর্কতা বা সিলিন্ডারের ব্যবহার পদ্ধতি সঠিক না হওয়ার কারণে এলপিজি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস নিঃসরণ হয়ে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু নির্দেশনা অনুসরণ জরুরি। জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দেশনাগুলো সবারই জানা উচিত।

জ্বালানি বিভাগ তিনটি ভাগে এই জনসচেতনতামূলক পরিপত্রটি জারি করেছে। গ্রুপ-১ এ বলা হয়েছে, সিলিন্ডার আগুনে বা অন্যভাবে গরম হলে তরল এলপিজি দ্রুত গ্যাসে রূপান্তরিত হয়ে অস্বাভাবিক চাপ বৃদ্ধির ফলে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হতে পারে। এজন্য সিলিন্ডার কোনোভাবেই চুলার বা আগুনের পাশে রাখা যাবে না। এতে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত গ্যাস বের করার জন্য এলপিজি সিলিন্ডারে তাপ দেওয়া যাবে না।

গ্রুপ-২ এ বলা হয়েছে, রান্না শেষে চুলা ও এলপিজি সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। গ্যাসের গন্ধ পেলে ম্যাচের কাঠি জ্বালানো যাবে না। ইলেকট্রিক সুইচ এবং মোবাইল ফোন অন বা অফ করা যাবে না। পাশাপাশি ঘরে গ্যাসের গন্ধ পেলে দ্রুত দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে এবং এলপিজি সিলিন্ডারের রেগুলেটর বন্ধ করতে হবে। রান্না শুরু করার আধা ঘণ্টা আগে রান্না ঘরের দরজা জানালা খুলে দিতে হবে। গ্রুপ-৩ এ বলা হয়েছে, এলপিজি সিলিন্ডার খাড়াভাবে রাখতে হবে। কখনোই উপুড় বা কাত করে রাখা যাবে না। চুলা সিলিন্ডার থেকে নিচুতে রাখা যাবে না। কমপক্ষে ছয় ইঞ্চি উপরে রাখতে হবে। চুলা থেকে যথেষ্ট দূরে বায়ু চলাচল করে এমন স্থানে এলপিজি সিলিন্ডার রাখতে হবে। রান্না ঘরের উপরে ও নিচে ভেন্টিলেটর রাখতে হবে। সিলিন্ডারের ভাল্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেগুলেটর ব্যবহার করতে হবে।

এ বিষয়ে প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. সামসুল আলম বলেন, সারা দেশে যেখানেই দুর্ঘটনা ঘটে আমরা তদন্ত করে দেখি। কোথাও সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে না। রান্নাঘরে গ্যাস জমে থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আবার অন্যক্ষেত্রে বাইরে থাকলে ভাল্ব দিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস বের হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আমাদের সবার আগে গ্রাহক সচেতনতার দিকে নজর দিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close