নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

প্রাইভেট কারের দখলে ঢাকার ৪০ শতাংশ সড়ক

নগরবিদরা প্রায়ই বলেন, যানবাহনের তুলনায় ঢাকার রাস্তা অনেক সংকীর্ণ। এ নিয়ে একটি সহজ হিসাব কষা যাক। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি থেকে মিরপুর-১০ নম্বর হয়ে আবদুল্লাহপুর রুটে চলাচল করে তেতুলিয়া পরিবহন। এ বাসটিতে আসন রয়েছে ৪৫টি। মাঝে মধ্যে দাঁড়িয়ে আরো ৮-১০ জনকেও ভ্রমণ করতে দেখা যায়। সে হিসাবে তেতুলিয়া পরিবহনের একটি বাসে ৫০-৫৫ জন ভ্রমণ করতে পারে অনায়াসে। অন্যদিকে ঢাকায় একটি প্রাইভেট কারে গড়ে সাধারণত ২-৪ জন যাত্রী যাতায়াত করেন। এ রকমের দুইটি প্রাইভেট কারে থাকে হয়তো গড়ে ৭-৯ জন যাত্রী। আর একটি বাস সড়কে চলে দুটি প্রাইভেট কারের জায়গা নিয়ে। এখন যদি যাত্রী পরিবহন এবং সড়কের জায়গা নেওয়ার হিসাব হয় তাহলে দেখা যাচ্ছে দুইটি প্রাইভেট কার যেটুকু জায়গা নিয়ে গড়ে ৭-৮ জন যাত্রী পরিবহন করছে ঠিক ততখানি জায়গা নিয়ে ৫০-৫৫ জন যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে একটি বাস।

তাহলে হিসাবের ফলটা কী দাঁড়াচ্ছে? উত্তরটা মিলছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) একটি সূত্রে। সূত্রটির মতে, ঢাকা শহরে প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ির যে সংখ্যা, সেটা হিসাব কষলে নগরীর সড়কের ৪০ শতাংশ জায়গাই প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। পক্ষান্তরে বাসের যে সংখ্যা, তার হিসাব কষলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহনকারী এসব বাহন চলে মাত্র ৬ শতাংশ জায়গা নিয়ে।

‘কত সংখ্যক যাত্রীকে পরিবহনের জন্য কতটুকু জায়গা কোন বাহনের জন্য থাকল, এমন দীর্ঘ পরিসরের হিসাবটা মেলানো হয় না বলে প্রতিনিয়তই নগরীতে বেড়ে চলেছে ব্যক্তিগত গাড়ি, আর বাড়ছে যানজট।’ এমন মন্তব্য ঢাকা আইডিয়াল কলেজের প্রিন্সিপাল এস এম মান্নান মনিরের। নিজের গাড়ি কেনার সামর্থ্য থাকলেও গণপরিবহনে চলাচল করেন তিনি।

এম মান্নান মনির বলেন, ‘প্রাইভেট কারের লাগাম টেনে না ধরলে নগরবাসীকে নগর ছেড়ে পালাতে হবে। অনেক বাড়িতে তিনজন সদস্য অথচ প্রাইভেট কারও তিনটি। সেজন্য আমরা সাধারণ যাত্রীরা ঢাকায় যানজটে পড়ে থাকি। প্রাইভেট কারের ওপর কর আরো বাড়াতে হবে। কর দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ করতে হবে। একটা প্রাইভেট কার থাকার পর কেউ যেন দ্বিতীয় প্রাইভেট কার না কিনতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাচ্চারা যেন প্রাইভেট কারে না আসে এ বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের উচিত প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণপরিবহন দেওয়া।’

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সূত্র বলছে, রাজধানীতে জনসংখ্যার অনুপাতে সড়ক হিসেবে ভূমির পরিমাণ অপ্রতুল। ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা ঢাকা শহরের বেশিরভাগ সড়ক দখল করে আছে। সাধারণত একটা বড় বাস ১৭টি এবং একটা ডাবল ডেকার বাস ২৫টি প্রাইভেট কারের সমান যাত্রী পরিবহন করতে পারে। অথচ ঢাকা শহরে সড়কের ৪০ শতাংশ জায়গাই প্রাইভেট কারের দখলে। পক্ষান্তরে গণপরিবহন চলছে মাত্র ৬ শতাংশ জায়গা নিয়ে।

ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার রাকিবুর রহমান বলছিলেন, ‘ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তা প্রাইভেট কারের দখলে থাকলেও অধিকাংশ মানুষই চলাচল করে বাসে। ১০ শতাংশ প্রাইভেট কারের যাত্রীদের কারণে আমরা ৯০ শতাংশ মানুষ দুর্ভোগে। প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে না আনলে ঢাকার যানজট কমবে না।’

রাকিবুর রহমানের মতে, ‘ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বহুতল ভবনে পার্কিং স্পেস থাকলেও ব্যবহার হয় অন্য কাজে। যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে বেড়ে চলেছে জটলাও। নগরে বসবাসরত বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বাসেরও অভাব রয়েছে। যেসব বাস চালু রয়েছে তাও জরাজীর্ণ, মানসম্মত নয়। ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ অথবা রিকশামুক্ত করা ছাড়া যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য আনা সহজ নয়।’

বড় উদ্বেগের বিষয়, গাড়ির চাপে এমন হাঁসফাঁস দশা হলেও দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি আমদানি হচ্ছে এবং এর সিংহভাগই ঢাকায় নামে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় নিবন্ধিত প্রাইভেট কারের সংখ্যা ৪ লাখ। দেশের অনেক প্রাইভেট গাড়িও ঢাকায় চলাচল করে, সে হিসাবে প্রকৃত সংখ্যা আরো বাড়বে।

আশার কথা হলো, যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেট কারের দাপট নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র বলছে, প্রাইভেট কার কেনায় নিরুৎসাহী করতে সামনের ডিসেম্বরে ৬০০ বাস নামবে নগরীতে। ক্রয়-প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আগে থেকে চলছে মেট্রোরেল ও বিআরটি লাইন-০৩ (গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) নির্মাণের কাজও। তাছাড়া প্রাইভেট কার ব্যবহার সামলাতে মানুষকে সচেতন করতেও কাজ করবে সরকার। সামনে এ বিষয়ে নানা ধরনের সভা ও সেমিনারও করা হবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাইভেট কারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা নিয়ন্ত্রণে একটা আইন আছে। এই আইনটা বাস্তবায়ন করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে নগরীর মানুষকে গণপরিবহনে চড়ার এবং তাদের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস গড়তে আমরা পদক্ষেপ নেব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close