নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্দোলনের দশম দিন
আমরণ অনশনে যাচ্ছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা লাগাতার কর্মসূচির পাশাপাশি আমরণ অনশনে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার থেকে আমরণ অনশনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবারও তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তার উত্তর পাশে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। গত সোমবার থেকে তারা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এর আগে তারা ১০ জুন থেকে থেমে থেমে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। এ আন্দোলনে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা (স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা) যোগ দিচ্ছেন।
আন্দোলন থেকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’; ‘এমপিও না দিলে বাড়ি ফিরে যাব না’; ‘এক দফা এক দাবি এমপিওভুক্তিকরণ চাই’Ñ এমন নানা স্লোগানে প্রেস ক্লাব এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছে। নিজেদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নারী-পুরুষ, শিক্ষক-কর্মচারীরা এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।
তারা বলেন, ‘আমরা বেতন-ভাতার জন্য পরিবার ছেড়ে রাজপথে নেমেছি। ঈদের দিনও পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারিনি। একটু মিষ্টি মুখে দেয়ার ভাগ্য হয়নি। ন্যায্য দাবি আদায়ে আমাদের স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে।’ এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া এস কে বাকার কলেজের প্রভাষক সুজন কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ২০০৪ সাল থেকে এই কলেজে চাকরি করছেন। কিন্তু এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পান না। ফলে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবেন বলে জানান তিনি।
বর্তমানে সারা দেশে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। ২০১০ সালের পর নতুন করে দেশে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনসহ কিছু ভাতা সরকার থেকে পান।
গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশনসহ লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। তখন একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করা হয়। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট বক্তৃতা দেন সেখানে নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীরা আবার আন্দোলনে নেমেছেন।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে এখনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারেন না। সমাজে তাদের কোনো সম্মান নেই। টিউশনি করিয়ে যা অর্থ আয় হয় তা দিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী বলেন, স্বীকৃতি পাওয়া সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে হবে। এবার দাবি পূরণ ছাড়া তারা রাস্তা ছাড়বেন না। আমাদের এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। উল্টো বিভিন্ন আইন তৈরি করে আমাদের বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এ কারণে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি। প্রতিদিন এ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। এতেও যদি আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হয় তবে রাজপথে বসেই আমাদের লাগাতার অনশন কর্মসূচি পালিত হবে। জীবন গেলেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তিকরণের দাবিতে গত ১০ দিন ধরে রাজধানী জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। রাজপথে খোলা আকাশের নিচে এভাবে টানা কর্মসূচি পালনের কারণে তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
"