আতাউর রহমান বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

চাঙ্গা হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের ক্রীড়াঙ্গন

দিনে দিনে চাঙ্গা হয়ে উঠছে ঠাকুরগাঁওয়ের ক্রীড়াঙ্গন। খেলোয়ারদের অনুশীলন এবং গ্যালারিতে কানায় কানায় দর্শক সমাগম মাঠের খেলায় দিচ্ছে পূর্ণতা। জেলার গন্ডি পেরিয়ে বিভাগীয়, জাতীয় পর্যায়ের খেলায়ও সুনাম কুড়িয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের খেলোয়াররা। বিশেষ করে নারী ফুটবল, হ্যান্ডবল, ক্রিকেট ও হকিতে নজর কাড়ছে সবার। শুধু তাই নয়, জাতীয় পর্যায়ের দলেও জায়গা করে নিয়েছে কয়েকজন।

আগে বছরে দু একটা ক্রিকেট বা ফুটবল টুর্নামেন্ট চললেও এখন হরহামেশায় চোখে পড়ছে ছেলে-মেয়েদের খেলা। প্রাথমিক পর্যায় থেকে অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যন্ত কখনো টুর্নামেন্ট, কখনো নিবিড় অনুশীলনে খেলোয়াড়দের পদচারণায় মাঠ মুখরিত। আর টুর্নামেন্টগুলো পরিপূর্ণতা পাচ্ছে দর্শকদের সরব উপস্থিতি।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ বছর থেকে ত্রিশটিরও বেশি ইভেন্টের খেলা চলছে। প্রতিটি খেলারই দল আছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল ও হকি খেলা। টুর্নামেন্ট হচ্ছে নিয়মিতই। জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে হচ্ছে ফুটবল লিগ, জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টসহ বেশ কিছু খেলা। পাশাপাশি খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।

হকি : শতাধিক খেলোয়াড় যাচাই-বাছাইয়ের পর জেলা ক্রীড়া সংস্থা তৈরি করেছে ১৫ সদস্যের নারী ও পুরুষ হকি দল। অনুশীলন আর খেলার মাধ্যমে দক্ষ খেলোয়াড় তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। ইতোমধ্যে মেয়েদের হকি দল জেলার গন্ডি পেরিয়ে বিভাগীয় পর্যায়েও খেলেছে। রাজশাহীর সঙ্গে করেছে ড্র, জাতীয় পর্যায়ে ঢাকাকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল ঠাকুরগাঁও জেলা। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে জেলা হকি দল গঠিত হলেও অল্প সময়ে তারা সুমান অর্জন করেছে। এ বছরের প্রান্ত সীমায় হকি খেলোয়াড়দের মাসব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবেন ২৫ জন নারী ও ২৫ জন পুরুষ খেলোয়াড়।

ফুটবল : ঠাকুরগাঁওয়ের ৪ জন নারী খেলোয়াড় ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। তাদের মধ্যে আদুরী ও সোহাগী যোগদান করেছেন নারী ফুটবল দলে। বর্তমানে জেলা নারী ফুটবল দলকে আরো শক্তিশালী করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। আর্থিক সংকটে অবশ্য কিছুটা হিমশিম খেলেও দক্ষ পরিচালনায় পিছ পা হয়নি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তবে মেয়েদের চেয়ে পিছিয়ে আছে জেলার ছেলেদের দল। জেলা ছাড়াও বিভাগ ও রাজধানীর বেশ কয়েকটি ক্লাবের হয়েও খেলছে তারা।

ক্রিকেট : ক্রিকেটেও পিছিয়ে নেই ছেলে ও মেয়েদের দল। বয়স ভিত্তিক দলে চ্যাম্পিয়ন ও জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপের কৃতিত্ব অর্জন করেছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে মাসব্যাপী আবাসিক ক্রিকেট প্রশিক্ষণের ছেলে ও মেয়েদের দলে ৫০ জন করে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবে।

বাস্কেটবল : বাস্কেটবলেও এগোচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে নারী দল। ছেলে ও মেয়েদের ২০ জন করে ৪০ জন খেলোয়াড়কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ১২ জন করে ২৪ জন নিয়ে জেলা দল গঠন করা হয়। এখানেও ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়েরা খেলায় তাদের নৈপুণ্যতা দেখাতে সক্ষম হয়। এ দলের ৪ জন খেলোয়াড় আবার সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় মহিলা বাস্কেটবল দলে অনুশীলনের। তবে ছেলেদের দল জেলা ছাড়াও বিভাগীয় পর্যায়েও খেলছে।

হ্যান্ডবল : হ্যান্ডবল টীম থেকে রশিদা, রিমা, তাসনিম এখন জাতীয় দলে খেলছে। এ বছরই তারা জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। হ্যান্ডবলেও ভালোই অগ্রগতি হচ্ছে জেলার নারী দলে।

খোখো : ঠাকুরগাঁও জেলা খোখোতে নারী ও পুরুষ পৃথক দুটি দল আছে ১১ সদস্যের। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে খোখো দলের খেলোয়াড়দের ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়। ২০১৬ সালে গঠন করা হয়েছিল দলটি।

টেবিল টেনিস: জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে ঠাকুরগাঁওয়ে ২শ ছেলে মেয়েকে টেবিল টেনিস খেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ প্রশিক্ষণ নিয়ে আন্ত:স্কুল প্রতিযোগীতায় কৃতিত্ব অর্জন করে। জাতীয় পর্যায়েও এ দলটি খেলেছে।

ভলিবল : ভলিবল দলটিও বেশ সৃমদ্ধ। জেলার টুর্নামেন্টে খেলছে এ দল। আগামী ডিসেম্বরে ৩০ জনকে দেওয়া হবে আবাসিক প্রাশক্ষণ।

ব্যাটমিন্টন : ব্যাটমিন্টনেও খেলছে ২০ জন। এসব শাটলারকেও দেওয়া হবে এক মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণ।

লং টেনিস: একশ জন ছেলে-মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গঠন করা হয়েছে ২০ জনের একটি দল। পরে ওই জেলা লং টেনিস দলকে আরো ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ের প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ দেন এই খেলোয়াড়দের।

অ্যাথলেটিক্স : গেল বছর জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটিক্স খেলায় অংশ নেয় ঠাকুরগাঁওয়ের খেলোয়াড়রা। এখানে মোট ৩৫ জন ক্রীড়াবিদ আছেন। এছাড়া সাঁতারে ৬ জন, জিমন্যাস্টিক্সে ১০ জন খেলোয়াড় প্রতিদিন অনুশীলন করছে।

জেলা ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক অগ্রগতি প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বাবু বলেছেন, ‘খেলোয়াড়দের গুনগত মান বৃদ্ধি করতে প্রশিক্ষণসহ খেলার সরঞ্জাম, পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলার ২৬টি ক্লাবকে যুগোপযোগি করে তুলতে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে।’ উন্নয়নের পেছনে ছুটতে কিছুটা বেগও পেতে হচ্ছে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে। বিসিবি কাউন্সিলর বাবু বলেছেন, ‘জেলা স্টেডিয়ামকে পরিপূর্ণ করা প্রয়োজন। এ জন্য জিগনেসিয়াম, ইনডোর স্টেডিয়াম, পুরো গ্যালারি নির্মান, সুইমিংপুলের একান্ত দরকার।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist