উপল বড়ুয়া

  ০৬ জুন, ২০১৮

নতুন রূপে পোল্যান্ড

রাশিয়া বিশ্বকাপে আট গ্রুপের মধ্যে এবার সবচেয়ে সহজ গ্রুপ সম্ভবত ‘এইচ।’ অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আবার কঠিনও। কারণ বাকি সাত গ্রুপে একটি করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল থাকলেও একমাত্র ‘এইচ’ গ্রুপেই তা নেই। তুলনামূলক শক্তির পরিমাপে চারটি দলই প্রায় কাছাকাছি। পোল্যান্ড, কলম্বিয়া, সেনেগাল ও জাপানের ক্ষমতা রয়েছে যে কাউকে হারিয়ে দেওয়ার।

তবে ফিফা র‌্যাঙ্কিং ও বিশ্বকাপ ইতিহাসের বিচারে এগিয়ে আছে পোল্যান্ড। ইউরোপের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে মধ্য ইউরোপের দেশটি। এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলবে পোলিশরা।

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ‘ই’ গ্রুপে ১০ ম্যাচের ৮টিতে জয় পেয়েছে পোল্যান্ড। হেরেছে মাত্র একটিতে। বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে ড্র হলেও চলত তাদের। কিন্তু জয়ের ধারায় থাকা পোলিশরা মন্টেনিগ্রোকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৪-২ গোলে। পোলিশদের বিশ্বকাপ অভিষেক ঘটে ১৯৩৮ সালে। এর মধ্যে সেরা সাফল্য বলতে ১৯৭৪ ও ১৯৮২ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অধিকার। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল লাল-সাদা ঈগলরা। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম এক স্মরণীয় ম্যাচ খেলেছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে। অবশ্য সেলেকাওদের বিপক্ষে পোলিশরা হেরেছিল ৬-৫ গোলে। ১১ গোলে ম্যাচটিতে পোল্যান্ড কিংবদন্তি আর্নেস্ট উইলিমভস্কি একাই করেছিলেন চার গোল।

একসময় বিশ্বকে চমকে দেয়া দেশটি হঠাৎ চলে যায় পর্দার অন্তরালে। তার জন্য অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দায়ী। যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে দেশটি সগর্বে ফিরে আসে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে। মূল পর্বে খেলার আগেই বিশ্বকে আরেকবার হতবাক করে দেয় তারা। ১৯৬৬ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে বাছাই পর্বে বাদ করে দিয়ে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয় পোলিশরা। তারপরই জন্ম দেয় রূপকথার। প্রথমবারের মতো উঠে যায় সেমিফাইনালে। কিন্তু সেবার তাদের অভিযান থামাতে হয় শেষ চারের অধ্যায়ে।

নিজেদের ইতিহাসে পোলিশরা আরেকবার বীরত্ব প্রদর্শন করে ১৯৮২ পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপে। ফাইনালটা যখন নিঃশ্বাস দূরত্বে তখন দ্বিতীয়বারের মতো স্বপ্নভঙ্গ হয় পোলিশদের। সেমির লড়াইয়ে তারা ২-০ গোলে হেরে যায় সেবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে। পরে ফ্রান্সকে ৩-২ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থানের সান্ত¦না নিয়ে ঘরে ফিরে দেশটি।

কিন্তু পরের বিশ্বকাপগুলো বারবার ব্যর্থতা উপহার দিয়েছে পোলিশদের। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে ফেরার পর টানা তিন বিশ্বকাপে তাদের খেলা দেখতে হয়েছে দর্শক হিসেবে। ২০০২ জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে ফিরলেও দৌড়টা শেষ করতে হয় গ্রুপ পর্বে। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপেও একই ভাগ্য বরণ করতে হয় পোলিশদের। পরের দুই বিশ্বকাপে আবার দর্শকের ভূমিকা পালন করতে হয় তাদের।

এবার সেই ব্যর্থতা গুছিয়ে নতুন রূপে বিশ্ব মঞ্চে ফিরেছে পোল্যান্ড। নিজেদের অষ্টম বিশ্বকাপটা আরেকবার স্মরণীয় করে রাখতে চায় দেশটি। সেই বার্তাটাও এরই মধ্যে দিয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। বাছাই পর্বে অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে গত বছর তারা উঠে এসেছিল ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ৫ নাম্বারে। অবশ্য বর্তমানে র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ১০তম। নিজেদের দুর্দিনে এক সময় নিজেদের সর্বনি¤œ ৭৮ নাম্বারেও নেমে গিয়েছিল পোলিশরা। তবে সেখান থেকে বহু আগেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে লাল-সাদার ঈগলরা। আসন্ন বিশ্বকাপে পোলিশদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রবার্ট লেভানডভস্কি। এ মুহূর্তে বিশ্বসেরা ফুটবলারদের একজন এই বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। বাবারিয়ানদের জিতিয়েছেন লিগ শিরোপা। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ১৬ গোল করে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতাও। এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী মৌসুমে বুন্দেসলিগায় সর্বোচ্চ ২৯ গোল করে জিতেছেন গোল্ডেন বুট। ৫১ গোল করে দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। মাঠে দলের নেতৃত্বটাও থাকবে তার ওপর। তাছাড়া বিশ্বকাপে পোলিশদের হয়ে আলো ছড়াতে পারেন কামিল গ্রসিকি, পিওতর জিলিনিস্কি, আরকাডিসুজ মিলিক ও লুকাস পিসজেকের মতো ফুটবলাররা। তবে দেশটিকে খেলতে হবে নিজেদের অন্যতম সেন্টার ব্যাক কামিল গ্লিককে ছাড়া। কাঁধের চোটের কারণে দলে জায়গা হয়নি এই মোনাকো খেলোয়াড়ের।

রাশিয়া বিশ্বকাপে পোল্যান্ড খেলবে স্বদেশি কোচ অ্যাডাম নাভালকার অধীননে। বিশ্বকাপে ‘এইচ’ গ্রুপে তাদের তিন প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া, সেনেগাল ও জাপান। ১৯ জুন স্পার্তাক স্টেডিয়ামে সেনেগালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে পোলিশরা।

তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, ফিফাডটকম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist