কক্সবাজার প্রতিনিধি
পাসপোর্ট করছে রোহিঙ্গা নারীরা
সক্রিয় ভুয়া মা-বাবা ও পাচার সিন্ডিকেট
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এবার সরাসরি প্রবাসে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পাসপোর্ট অফিস সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও দালালদের যোগসাজশে ভুয়া মা-বাবা এবং ডকুমেন্ট তৈরি করে তাদের পাচার করার প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাচারের তালিকায় সবার আগে রয়েছে রোহিঙ্গা নারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জালিয়াতির অভিযোগে আটক হয় রেজিয়া বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারী। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ- ভুয়া ডকুমেন্ট, বাবা-মা সাজানো ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক না থাকার। এ কারণে তাকে আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন মাসের সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার সঙ্গে আসা সাজানো মা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এদিকে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্রের সঙ্গে নিজেদের ছবি সংযোজন করে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আবেদন করার দায়ে গত ৮ নভেম্বর বুধবার দুপুরে দুই তরুণীকে আটক করে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ। তখন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা পালং ইউনিয়নের রুম খাঁ নতুন পাড়ার আলী আহমদের দুই মেয়ে ছেনুয়ারা ও তৈয়বা বেগমের নামে জন্মনিবন্ধন সনদ, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্রসহকারে দুটি পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার জন্য জমা কাউন্টারে দাঁড়ান তারা। তাদের সন্দেহজনকভাবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা রোহিঙ্গা এবং ভুয়া কাগজপত্রের বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু তাদের সঠিক পরিচয় কী, তা জানাতে পারেনি পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।
তবে অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অফিস ক্লিনার খাদেমুল ইসলাম সাগর ও কাউন্টারে পাসপোর্টে সম্পর্কে জমা নেওয়া ফাইলগ্রহীতা সবুজ বড়–য়ার সঙ্গে সমঝোতা করে একটি চক্র এসব ভুয়া ডকুমেন্ট জমা দিতে আসে। গত ৮ নভেম্বর জমা নেওয়ার কাউন্টারে সবুজ বড়–য়ার পরিবর্তে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম ছিলেন। তখন দুই রোহিঙ্গা তরুণী ফাইল জমা দিতে গেলে মাসুম ভুয়া কাগজপত্র আনায় তাদের আটক করে। কিন্তু ততক্ষণে পাসপোর্ট অফিসের অফিস ক্লিনার খাদেমুল ইসলাম সাগর তাদের সাজানো সে মাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন। বিষয়টি অস্বীকার করে সবুজ বড়–য়া বলেন, ‘ওই নারী নামাজ পড়ার কথা বলে পালিয়ে যান। আমরা বুঝতেই পারিনি কখন যে তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া আমি ভুয়া পাসপোর্ট তৈরিতে কোনোভাবেই জড়িত নই।’
অভিযোগ আছে, দালাল ছাড়া ফাইল জমা দিতে গেলে দালালদের সহযোগিতায় আসছে বলে সেই ফাইল রেখে দেয় পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু দালালদের মাধ্যমে চ্যানেল ফি (অতিরিক্ত টাকা) দিয়ে যদি আসা হয়, তখন সেই ফাইলে কোনো অভিযোগ তো দূরের কথা কোনো প্রশ্নই করেন না পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা। তথ্য সংগ্রহকালে এ প্রতিবেদকের কাছে আসে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের আয়েশা খাতুন নামে এক নারী। তিনি বলেন, ‘কোনো দালালকে টাকা না দিয়ে আমি আমার ফাইল নিয়ে গিয়েছিলাম পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু দালালদের রহস্যজনক চিহ্ন না থাকায় তারা আমার ফাইলটি আটকে রাখে। কি হয়েছে বললে তারা বলে এখানে অনেক সমস্যা আছে। এগুলো ঠিক করতে হবে। এরপর তারা আমার ফাইলটি আর দেননি।’
আয়েশা খাতুন বলেন, ‘আমি টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা। আমার বাবা-মা দুজন বাংলাদেশের নাগরিক। জাতীয় পরিচয়পত্র ও দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বসবাসের জমির খতিয়ানও রয়েছে। কিন্তু তার পরও পাসপোর্ট আবেদনের সেই ফাইল গ্রহণ করেনি।’ কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম বলেন, এরই মধ্যে ভুয়া ডকুমেন্ট নিয়ে পাসপোর্ট করতে আসা কয়েকজন নারীকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে তাদের ভুয়া ডকুমেন্টও। হয়তো পরোক্ষভাবে কোনো দালাল সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের জন্য পাসপোর্ট করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আশা করি তারা সফলতা পাবে না। কারণ সব কিছু কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করা হচ্ছে। ভুয়া পাসপোর্ট তৈরির সহযোগিতায় তার প্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত নেই বলে তিনি জানান।
"