নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ আগস্ট, ২০১৭

বিচারপতি খায়রুল হক বললেন

বিরাগ থেকে রায় দেওয়া হলে প্রধান বিচারপতি তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ‘ভ্রমাত্মক’ রায় আদালতের বিরাগ থেকেও হতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। সংসদ ও সরকারের প্রতি বিরাগ থেকে যদি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এই রায় দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মনে করেন তার এই পূর্বসূরি। বিভিন্ন বিষয়ে সংসদ ও সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের টানাপড়েনের মধ্যেই সম্প্রতি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিলের রায় দেন আপিল বিভাগ, যা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সিনহা বাংলাদেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। পর্যবেক্ষণে ‘বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে রায়ে ক্ষুব্ধ সরকারি দলের নেতারা কড়া সমালোচনা করছেন, বাক-আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সিনহাও।

এই রায়ের অন্যতম সমালোচনাকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা জজ সাহেবেরা কোনোদিনই অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কিছু করব না। রায়ে যদি কোনো অনুরাগ বা বিরাগ রিফ্লেক্ট করে, তাহলে হোয়াট ইজ দ্য কনসিকোয়েন্স অব দ্যট জাজমেন্ট। থিঙ্ক অ্যাবাউট ইট। আমার বলার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘যে জজ সাহেব অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে... যদি আপনারা অনুরাগ বা বিরাগ বলে মনে করেন আপনারা... যেগুলো আমি বললাম, ‘পার্লামেন্ট ইজ ইমম্যাচিওর’, ‘ডেমোক্রেসি ইজ ইমম্যাচিওর’, ‘পার্লামেন্ট আমাদের ডাইরেকশন শোনেনি’, এই কথাগুলো যদি অনুরাগ বিরাগের মধ্যে চলে আসে তাহলে সেই জজ সাহেবের পজিশনটাই বা কী হবে?...তিনি ওথ বাউন্ড থাকছেন কি না-সেটাও আপনারা বিচার-বিবেচনা করে দেখুন। আমি পয়েন্ট আউট করে দিলাম। ওথ ভঙ্গ হলে কী হতে পারে? আপনারা জানেন কী হতে পারে।’

ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় শোক দিবস, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতি শীর্ষক’ আলোচনা সভায় বিচারপতি খায়রুল হক তাকে নিয়ে সমালোচনার জবাবও দেন। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা অবৈধ ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালতের রায়টি হয়। জিয়াউর রহমান আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে বিএনপি। সেই সঙ্গে দলটির নেতারা বিচারপতি খায়রুল হকের সমালোচনাও করছেন। তারা বলছেন, রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে খায়রুল হক আইন কমিশনের চেয়ারম্যান থাকার অযোগ্য হয়েছেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিচারপতি খায়রুল হক আইন কমিশনের কাজের ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেন, যেহেতু আইন নিয়ে গবেষণা করা তাদের কাজ, সেহেতু আদালতের এই রায় তাদের গবেষণার বিষয়ের মধ্যেই পড়ে। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দ্বৈত শাসনই হচ্ছে উত্তম ব্যবস্থা। কারণ বিচারপতিরা ফেরেশতা না। তারাও ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন।’ সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে-‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচারবিভাগীয় দায়িত্বপালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল-নির্ধারণ, পদোন্নতিদান, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist