নিজস্ব প্রতিবেদক ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ১১ আগস্ট, ২০২০

সিনহা হত্যায় ‘মিলেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’

* এভাবে আর যেন কেউ প্রাণ না হারায় : সিনহার মা * মুক্তি পেলেন সিফাত

সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যায় চার আসামির কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিতে আবেদন করেছে। যাদের ইতোমধ্যে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালতে এই চারজনের ১০ রিমান্ড চেয়ে আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। আদালত আগামী ১২ আগস্ট আবেদনটি শুনানির জন্য রেখেছে। এরা হলো কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, এই চার আসামির কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে নতুন করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। এর আগে র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

এদিকে, সিনহা রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার বলেছেন, এভাবে আর যেন কেউ প্রাণ না হারায় সেটাই তার চাওয়া। এখনকার ছোট শিশুদের সামনে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য এ ধরনের হত্যাকা- বন্ধ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন সন্তানহারা এই মা।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) নেতারা গতকাল দুপুরে ঢাকার উত্তরায় সিনহাদের বাড়িতে যান তার মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান নাসিমা আক্তার। এ সময় রাওয়া চেয়ারম্যান খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, ওই ঘটনায় যেসব পুলিশ জড়িত ছিল, তাদের অস্ত্রগুলো যাতে জব্দ করা হয়। এটা লাগবে তদন্তের খাতিরে। যারা তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে তারা হয়তো এটা করবে। যারা তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে তারা অত্যন্ত দক্ষ এবং পক্ষপাতহীনভাবে তদন্ত করবে। আমরা তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করছি।

নাসিমা আক্তার বলেন, সিনহা হত্যাকা-ের ঘটনায় এ পর্যন্ত তদন্তে আমরা সন্তুষ্ট। আমার ছেলে পজিটিভ ছিল এবং সব সময় বলত ‘বি পজিটিভ’ এবং আমিও ‘বি পজিটিভ’র পক্ষে আছি। আমার ছেলে সাধারণ জনগণ থেকে আরম্ভ করে সবাইকে আপন করে ভাবত, আপন করে দেখত প্রত্যেকটা মানুষকে। তার সঙ্গে গাড়িতে করে অনেক ঘুরেছি কিন্তু দেখতাম সে মেজর পরিচয় দিত না। তার যে ব্যবহার, ব্যবহার দিয়ে সে তার কাজগুলো করত। আমি তাকে এই শিক্ষাই দিয়েছি, আমার এটা ভালো লাগত।

ছেলে কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী ছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাকে মুখে বলত না, কিন্তু বুঝতাম যে, কর্মে বিশ্বাসী ছিল সিনহা। এই যে বিশ্ব ভ্রমণ করবে কিন্তু পরিকল্পনা এবং প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করত। জানাতে চাইত না সারপ্রাইজ দেবে দেশকে।

পরবর্তী জেনারেশনের কথা অনেক ভাবত। বলত, এই পৃথিবীতে আমরা ভালো থট রেখে যাই। যারা নেগেটিভ ভাবত তাদের বিষয়ে বলত, কেন হবে না? হবে না কেন?

সিনহার প্রতিটি কর্মকা-ে তার পূর্ণ সমর্থন ছিল জানিয়ে মা বলেন, ও যেটা করত ভেতরে ভেতরে গর্ববোধ করতাম। আসলে ওর চরিত্রের সঙ্গে আমার চরিত্রের মিল আছেÑ কোনো চাহিদা ছিল না, কোনো কিছু ছিল না। সিনহা শুধু কাজ করতে চাইত আর সে কাজের জন্য আমি কখনো বাধা দিইনি, কেন দেব?

এদিকে, কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সিনহার সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। গতকাল দুপুর ২টায় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পরপরই একটি গাড়িতে করে তিনি কারাগার এলাকা ত্যাগ করেন।

কক্সবাজার জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন জানান, আদালত থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছালে কারাবিধি মতে সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে দুপুর ২টায় কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজে সিনহাকে সহযোগিতা করার জন্য সিফাতসহ স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী কক্সবাজারে যান। সিনহা হত্যার প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী সিফাত।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদক আইনে এবং রামু থানায় মাদক আইনে মোট তিনটি মামলা করে। এসব মামলায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সঙ্গে থাকা শাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রানী দেবনাথকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এ ছাড়া ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ইন্সপেক্টর লিয়াকত, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় গত ৬ আগস্ট বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত আসামি কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close