প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

করোনাভাইরাস : বিশ্বব্যাপী জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ায়, বিশ্বব্যাপী জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত বৃহস্পতিবার এক জরুরি বৈঠকের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ঘোষণা দেয়। ডব্লিউএইচও-এর প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, ‘চীনে কী হচ্ছে সেটার জন্য এই ঘোষণা দেওয়া হয়নি বরং অন্যান্য দেশে যা ঘটছে সেটাই এই ঘোষণার মূল কারণ। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে যে, অন্যান্য ১৮টি দেশে আরো ৯৮ জন মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে চীনের বাইরে এখনো কারো মৃত্যু হয়নি। চীনে এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২১৩ জনের।

এই ভাইরাস দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। জেনেভাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় ড. টেড্রোস ভাইরাসটিকে একটি ‘নজিরবিহীন প্রাদুর্ভাব’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি চীনা কর্তৃপক্ষের ‘অসাধারণ পদক্ষেপ’ গ্রহণের প্রশংসা করেন এবং বলেছেন যে চীনে বাণিজ্য বা ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করার কোনো কারণ নেই। ‘একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলি, এই ঘোষণাটি চীনের প্রতি অবিশ্বাস বা অনাস্থার জন্য নয়,’ তিনি বলেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, যেসব নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার সক্ষমতা নেই, এই ভাইরাস শনাক্ত করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির দেখভাল করার সরঞ্জামের অভাব রয়েছে, সেখানে এই ভাইরাস অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন এটি নিয়ন্ত্রণ করা অবিশ্বাস্য রকমভাবে কঠিন হয়ে পড়বে। আক্রান্ত হওয়ার ৯৯ শতাংশ ঘটনাই ঘটেছে চীনে। ডব্লিউএইচও এতটুকু নিশ্চিত হতে পারছে যে, দেশটি সেখানকার এই প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের চীনে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর চার স্তরের সতর্কতা জারি করেছে। জার্মানি, জাপান, ভিয়েতনাম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষে-মানুষে ভাইরাস সংক্রমণের আটটি ঘটনা ঘটেছে।

তবে বিভিন্ন দেশ সীমান্ত বন্ধ করার পাশাপাশি বা ফ্লাইট বাতিল করার পদক্ষেপ নিয়েছে গুগল, আইকা, স্টারবাকস এবং টেসলার মতো সংস্থাগুলো।

তবে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে ডব্লিউএইচও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় তাদের নজরদারি চালাতে পারবে। যেন তাদের রোগ নির্ণয় করার পদ্ধতি জোরদার এবং এ ধরনের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় প্রস্তুত করা যায়।

কোনো রোগ খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি মুখে পড়লে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। গত এক দশকে পাঁচবার এরকম বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু, ২০১৩ সালে ইবোলা, ২০১৪ সালে পোলিও, ২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস এবং ২০১৯ সালে আবারও ইবোলার প্রাদুর্ভাবের কারণে বৈশ্বিক সতর্কতার ঘোষণা আসে।

চীন থেকে আসা যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের সংক্রমণ এড়াতে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য তাদের আলাদা করে রাখা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া তাদের মূল ভূখ- থেকে ২ হাজার কিলোমিটার দূরে ক্রিসমাস দ্বীপের একটি আশ্রয় শিবিরে এই ফিরিয়ে আনা নাগরিকদের আলাদা করে রাখার পরিকল্পনা করছে।

অন্যান্য সাম্প্রতিক ঘটনা

ইতালির রোমে দুজন চীনা পর্যটক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে চীনে যাওয়ার ফ্লাইট স্থগিত করে ইতালি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কারো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে শিকাগোর স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। প্রায় ২০০ মার্কিন নাগরিককে উহান থেকে ফিরিয়ে এনে ৭২ ঘণ্টার জন্য তাদের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে আলাদা করে রাখা হয়েছে। রাশিয়া তাদের পূর্বদিকে চীনের সঙ্গে ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার (২ দশমিক ৬৭০ মাইল) সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাপানের দুটি ফ্লাইট ইতোমধ্যে টোকিওতে অবতরণ করেছে। জাপান এখন চীনের জন্য তাদের সংক্রামক রোগের পরামর্শের স্তর বাড়িয়েছে। প্রায় ২৫০ জন ফরাসি নাগরিককে উহান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভারত ভাইরাসটির প্রথম ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে। দক্ষিণে কেরালার এক ছাত্র, যিনি উহান শহরে পড়াশোনা করতেন, তার শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। চীনের সঙ্গে সমস্ত ফ্লাইট সংযোগ নিষিদ্ধ করেছে ইসরায়েল। পাপুয়া নিউ গিনি, ‘এশিয়ান বন্দর’ থেকে সমস্ত ভ্রমণকারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

জানা গেছে, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভিয়েতনামে আটজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যারা কখনো চীনে যাননি। আর চীনের মূল ভূখ-ের বাইরে আরো ১৮ দেশে অন্তত ৯৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে ডব্লিউএইচও। করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনো মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

চীনের যে প্রদেশ থেকে এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়েছে, সেই হুবেইয়ের বেশির ভাগ এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে গত ১০ দিন ধরে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close