প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে কলকাতায় পা রাখবেন। তারপর বিমানবন্দর থেকে সোজা ইডেন গার্ডেনসে যাবেন ভারত-বাংলাদেশ ঐতিহাসিক টেস্টের উদ্বোধন করতে। ‘প্রিয় আপা’র সাক্ষাৎ পেতে শুক্রবার কোনো জরুরি কর্মসূচি রাখেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ভারত-বাংলাদেশ গোলাপি টেস্ট ম্যাচের শুরুর কয়েক ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী উপভোগ তো থাকবেনই কিন্তু দুই নেত্রীর বহুল আলোচিত বৈঠকটা কখন হবে তা নিয়ে আগ্রহ এখন তুঙ্গে। শুক্রবার ৩ দফা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হবে মমতার। ইডেনে খেলা দেখা ছাড়াও সন্ধ্যা ৬টায় তাজ বেঙ্গলে একটি কূটনৈতিক বৈঠকে বসবেন হাসিনা-মমতা। তাদের এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা উপমহাদেশ। কূটনৈতিক দিক থেকে এই বৈঠক যে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কলকাতার গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক মহলে এখন প্রবল আগ্রহ ‘কী কথা হবে এই দুই নেত্রীর মধ্যে’।

মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘ইডেনে আমি থাকব, শেখ হাসিনা থাকবেন। আমাকে আজকে (গতকাল) হাসিনা ফোন করেছিলেন।’ মুখ্যমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, শুধু ইডেনে বসে একসঙ্গে খেলা দেখা নয়, শুক্রবার মোট ৩ বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হবে তার। এ সময় উপস্থিত থাকবেন বিশ্বনাথান আনন্দ, লিয়েন্ডার পেজ, সানিয়া মির্জাসহ ২০০০ সালে ভারত-বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট ম্যাচের খেলোয়াড়রা।

প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে সোজা ইডেন গার্ডেনস সেখান থেকে দুই দলের সাবেক ক্রিকেটার এবং অতিথিদের সঙ্গে সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ এবং এরপর আরো ঘণ্টা দুয়েক কলকাতায় অবস্থান। বলা হচ্ছে, ইডেনে সৌজন্যমূলক কথা-বার্তা হলেও দুই নেত্রী একদম ঘরোয়াভাবে আলোচনা সারবেন। আশা করা হচ্ছে, বৈঠকে উঠে আসতে চলেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু। অনেকের ধারণা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানাতে সামনের মৌসুমে তিস্তার পানি সামান্য হলেও ছাড়তে রাজি হবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি আত্রেয়ী, মহানন্দা, পুনর্ভবা, টাঙ্গন নদীর পানি ব্যবহার নিয়েও কথা হতে পারে।

এর আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন দিল্লিতে এসেছিলেন তখন ফোনে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কথা হয়েছিল তার। সেই সময় তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দুজনের। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই এই বিষয়টি অমীমাংসিত হয়ে রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন তখন তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, অচিরেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। এক্ষেত্রে প্রধান কারণ মমতার আপত্তি। তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দেওয়ার ক্ষেত্রে মমতা বার বারই আপত্তি জানিয়ে এসেছেন। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে পানির সমস্যা হবে বলে বার বার সরব হয়েছেন তিনি। যার ফলে বিষয়টি এখনো ঝুলে রয়েছে।

তিস্তার পাশাপাশি আরো যে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তার একটি হলো এনআরসি ইস্যু ও অন্যটি সীমান্ত সমস্যা। দিল্লিতে বৈঠকের সময় নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে কাউকে পাঠানো হবে না। যদিও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশজুড়ে এনআরসি কার্যকর হবে বলে ঘোষণা করেছেন। তাই এনআরসি ইস্যুতে কথা হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও।

এদিকে, নিজে খেলতে না পারলেও টেস্ট দেখতে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। ইডেন গার্ডেনসে ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টা বাজিয়ে ম্যাচটি উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। এর আগে টেস্টের ধারাভাষ্য দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন মাশরাফি। তবে সেই আমন্ত্রণ তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ কলকাতায় পা রাখতে চললেও টেস্টের আগের দিন বৃহস্পতিবারই সপরিবারে এখানে পৌঁছেছেন মাশরাফি।

কৃত্রিম আলোয় গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) নতুন সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আজ মাঠে হাজির থাকবেন সরকারপ্রধান। ইডেন টেস্টের প্রথম চার দিনের সব টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।

"