আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১২ নভেম্বর, ২০১৯

রোহিঙ্গা গণহত্যা

জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা

রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে মিয়ানমার। নেদারল্যান্ডসের হেগে দ্য ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার এই মামলা করেছে ওআইসিভুক্ত দেশ গাম্বিয়া। রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য সমালোচনার মুখে থাকা মিয়ানমার এর মধ্য দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক কোনো আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

আইসিজে হলো জাতিসংঘের প্রধান বিচারিক অঙ্গ। ১৯৪৫ সালে গঠনের পরের বছর থেকে এই আদালত কার্যকর। লন্ডনভিত্তিক দৈনিক গার্ডিয়ান জানায়, গাম্বিয়া তাদের ৪৬ পৃষ্ঠার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের আবাস ধ্বংসের কথা বলেছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেইসঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল। গত দুই বছরে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নালিশ গেছে। তার মধ্যেই জাতিসংঘের আদালতে মামলা করল আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গার্ডিয়ান লিখেছে, যদি আইসিজে মামলাটি বিচারের জন্য গ্রহণ করে, তবে এটাই হবে গণহত্যার নিজস্ব তদন্তে আইসিজের প্রথম উদ্যোগ। এর আগে তদন্তের ক্ষেত্রে তারা অন্য সংস্থার ওপর নির্ভর করত।

আইসিজের বিধি অনুসারে, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে। গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তি বিধানে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। ১৯৫৬ সালে ওই ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’ সই করে মিয়ানমার।

রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে যে ১০টি সংগঠন গাম্বিয়াকে সহায়তা করছে, তাদের একটি হলো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এইচআরডব্লিউর পরিচালক পরম-প্রিত সিং এক বিবৃতিতে বলেন, গাম্বিয়ার এই আইনি পদক্ষেপের ফলে বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলো। এখন আদালত রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচাতে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিতে পারে। ১৯৯৩ সালে বসনিয়ায় গণহত্যার বিচারের শুরুতে আইসিজে সার্বিয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিয়েছিল। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে গাম্বিয়ার পদক্ষেপে সহায়তা দিতে অন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ‘নো পিস উইদাউট জাস্টিস’-এর পরিচালক অ্যালিমস স্মিথ। এই সংগঠনটিও এ কাজে এইচআরডব্লিউর মতো সহায়তা দিচ্ছে।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার বলে আসছে, তাদের ওই লড়াই ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে, কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে নয়। তবে জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, রাখাইনে গণহত্যা ঠেকাতে, এতে জড়িতদের বিচার করতে মিয়ানমার সরকার কিছুই করেনি। সেখানে যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে সেটা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টার সমতুল্য।

রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ-নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, সাতটি ঘটনার মধ্যে এটাও একটা, যা প্রমাণ করে রোহিঙ্গা জাতিগতভাবে নির্মূল করাই ছিল মিয়ানমারের সেনা অভিযানের উদ্দেশ্য।

গাম্বিয়ার পরিচিতি

এটি পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। আফ্রিকা মহাদেশের মূল ভূখ-ের ক্ষুদ্রতম দেশ। এটি উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সেনেগাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। পশ্চিমে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর। গাম্বিয়া একটি কৃষিপ্রধান দেশ। গাম্বিয়া ১৯০০ শতকে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯৬৫ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। দারিদ্র্যপীড়িত সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ গাম্বিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। তাদের ৯৫ শতাংশই সুন্নি মুসলমান। তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আহমদিয়া ও শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে গাম্বিয়ায় যাওয়া অভিবাসীদের বেশির ভাগই শিয়া মুসলমান। এ ছাড়া ৪ শতাংশ খ্রিস্টান এবং ২ শতাংশ আদিবাসী রয়েছে। তবে তারা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম ও অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান পালন করতে পারছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close