নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ জুলাই, ২০১৯

লোভের ফাঁদে ফেলে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ!

ফারইস্ট ইসলামী কো-অপারেটিভ চেয়ারম্যান গ্রেফতার

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ অন্যান্য ২৮টি মামলায় ৪ বছর ধরে পলাতক থাকা আসামি ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শামীম কবিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আসামি শামীম কবিরকে গত ৯ জুলাই সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরো জানান, ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ২০০৬ সালে কুমিল্লার সমবায় কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে নিবন্ধিত হয়। অনুমোদনের পর শামীম কবির ও তার কয়েকজন আত্মীয়সহ স্থানীয় কিছু যুবকদের নিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মুন্সিরহাট বাজারে একটি অফিস খুলে কার্যক্রম শুরু করেন। পরে তা চট্টগ্রাম বিভাগীয় অনুমোদন নিয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় শাখা অফিসের অনুমোদন নেয়। সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার শামীম কবির ধর্মকে পুঁজি করে কিছু ধর্মভীরু ও স্বল্প শিক্ষিত লোকজনকে পবিত্র কোরআন শরিফসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে সুসজ্জিত অফিসে দাওয়াত দিয়ে তাদের (এফআইসিএল) অফিসে টাকা বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ মাহফিল করে নিজেকে ধর্মের বরপুত্র হিসেবে দাবি করে। এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আড়াই হাজার টাকা মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকে। এসব বিষয়ে পত্রিকায় লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহে লিপ্ত থাকে। শুরুর কয়েক বছর ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ওয়াদা অনুযায়ী মুনাফা দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে।

কয়েক বছর লাভজনক মুনাফা পেয়ে সাধারণ মানুষ নিজের বহু কষ্টে অর্জিত টাকা ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে জমা রাখত। বেশি মুনাফার আশায় কেউ কেউ অন্য জায়গা থেকে টাকা পয়সা ধার করে এনে জমি জমা বিক্রি করে সমিতিতে টাকা রাখত। কোনো কোনো সরকারি বেসরকারি কর্মচারী পেনশনের টাকা বাসায় না নিয়ে জমাকৃত টাকা দ্বিগুণ-তিনগুণ করার জন্য ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে জমা রাখে।

প্রতারণার বিষয়ে মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন রকম ছলচাতুরি প্রয়োগ করে শামীম ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় ২৫টি অফিস খুলে আমানত সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রাখে। আসামি শামীম কবিরসহ মামলার অপরাপর আসামিদের সহায়তায় পরস্পর যোগসাজশে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকদের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এরপর ২০১৩-১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়ে তিনি কৌশলে আত্মগোপন করেন। তখন প্রচার করা হয় চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে।

সিআইডি জানায়, শামীম কবির আত্মসাৎ করা টাকায় তার নিজ গ্রাম ও সিলেটের জৈন্তাপুর থানা এলাকায় প্রাসাদসম বাড়ি, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানা, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ডসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্লট, ফ্ল্যাটসহ বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিসহ প্রায় ৪০ একর জমি কিনেছেন।

২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে ১৩টি মামলা করে দুদক। সেসব মামলা বর্তমানে তদন্ত করছে সিআইডি। আর সেই মামলাতেই শামীম কবিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close