নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ এপ্রিল, ২০১৯

ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রমাণ সাবেক ওসির বিরুদ্ধে

ফেনীর এসপি-ওসিসহ ৪০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষা কেন্দ্রে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসির ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাফিলতির বিষয়ে তদন্ত চলছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে কারণ ২৭ তারিখের (২৭ মার্চ) যৌন হয়রানির ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা নিলে মর্মান্তিক ওই ঘটনা এড়ানো যেত। এমনটি বলেছেন পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি মো. রুহুল আমীন। আর পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা জানিয়েছেন, নুসরাত হত্যার তদন্ত চলছে। তবে তথ্য সংগ্রহের প্রাথমিক কাজ শেষ। শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রতিবেদনে কার কতটুকু দায় ছিল কিংবা ছিল কি না সে বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ডিআইজি মো. রুহুল আমীন বলেন, আগে থেকেই অধ্যক্ষ সিরাজের অনেক খারাপ হিস্ট্রি ছিল। ব্যাপারটি গভর্নিং বডির সদস্যরাও জানতেন। যদি আগে ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।

এআইজি সোহেল রানা জানান, এ ঘটনায় ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট ৪০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, নুসরাতকে যৌন হয়রানির পর তাকে আগুন দেওয়া এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন তাদের জবানবন্দি নিয়েছে তদন্ত কমিটি। এই তালিকায় পুলিশ সুপার ও ওসিসহ মাদ্রাসা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন।

সোনাগাজী থানার আলোচিত ওসিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর ঢাকার উত্তরায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদর দফতরে রাখা হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ওসি দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন’ এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এপিবিএন সদর দফতর অত্যন্ত শৃঙ্খল ও নিরাপত্তা বেষ্টিত। এখান থেকে চাইলেই কেউ চলে যেতে পারেন না। তবে জেলা শহরের কোনো ওসিকে ক্লোসড করা হলে তাকে ওই জেলায় বা রেঞ্জ ডিআইজির অফিসে সংযুক্ত করা হয়। ওসি মোয়াজ্জেমকে ঠিক কেন এপিবিএন সদর দফতরে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কেউ।

এআইজি সোহেল রানা বলেন, প্রতিবেদনে যদি পুলিশের কোনো সদস্যের দায়িত্বে অবহেলা বা অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের অপরাধ ফৌজদারি সমতুল্য হলে প্রচলিত আইনে মামলা হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনার তদন্ত মোটামুটি শেষ। এখন প্রতিবেদন প্রস্তুতের কাজ চলছে। আশা করছি, ৮-১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। ওই ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান। সে সময় মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছেÑ এমন সংবাদ দিলে রাফি ওই বিল্ডিংয়ের চারতলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close