মোস্তফা কামাল

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ডাকসুর মনোনয়ন বিতরণ আজ

প্রচারে ব্যস্ত ছাত্রলীগ অন্যরা আন্দোলনমুখী

ছয় দফা দাবিতে উপাচার্য ভবন ঘেরাও

বাজনা বাজল ডাকসু নির্বাচনের। ২৮ বছর পরে বেশ হাঁকডাক দিয়েই ডাকসু ফিরে এসেছে। অনেকটা ছোটবেলায় হারিয়ে ফেলা লেইস-ফিতাওয়ালার মতো। তবে এমনি এমনি হেঁটে এত বছর পর ডাকসু আসেনি। তার জন্য ঘাম শ্রম দিয়েও হয়নি; শেষ পর্যন্ত রিট করতে হয়েছে। তারপর আদালত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মার্চ অবধি সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল কিন্তু এর এক বছরের মাথায় মৃত্যু ঘটেছিল ডাকসুর। অথচ এর উল্টোটিই হওয়ার কথা ছিল। ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে ডাকসুর অস্তিত্ব রয়েছে। রয়েছে আলাদা গঠনতন্ত্র। সেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছরই নির্বাচন হওয়ার কথা। সেখানে বাংলাদেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র সাতবার সেই নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাহবা হাঁকানো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন ব্যস্ত অনেকটাই। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ব্যস্ত, অন্য সংগঠনগুলো আন্দোলনমুখী। নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ও তারিখ ঘোষণা এবং দফায় দফায় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তি, ঐক্য, অনৈক্য নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো এগোলেও শেষমেশ আন্দোলন ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে করা নিয়ে। এমন অবস্থায় আজ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দেওয়া শুরু হচ্ছে। চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে মনোনয়নপত্র নিচ্ছে না ছাত্রদল। ছাত্রদলের নেতারা জানিয়েছেন, তারা মনোনয়নপত্র নেবে না। হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র ও প্রার্থিতার বয়সসীমা বাতিলসহ দাবি আদায়ে শিগগিরই সাংগঠনিক কর্মসূচি দেবে।

এদিকে, এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমেছে ছাত্রলীগসহ অন্য সংগঠনগুলোর নেতারা। ভিপি-জিএস পদে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে মরিয়া তারা।

আর আবাসিক হলের বদলে একাডেমিক ভবনে ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র করাসহ ছয় দফা দাবিতে গতকাল সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে নির্বাচনে যদি সামান্য ঘাটতি থাকলেও শুভ সূচনা চান উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এটি উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। সামান্য ঘাটতিও যদি থাকে এর শুভ সূচনা হোক। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিতরা এর সংস্কার করতে পারবে।

অন্যদিকে আজ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর থেকে প্রচারণায় সক্রিয় হবেন পদপ্রত্যাশীরা। নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রচারণায় এগিয়ে থাকতে চাইছে সংগঠনগুলো। ক্যাম্পাসের সব হলে ছাত্রলীগের অবস্থান সুদৃঢ় হওয়ায় প্রচারণায় এগিয়ে থাকবে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রদের হলে ব্যাট-বল দিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাতে হলের অতিথি কক্ষে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনও হলে হলে গিয়ে গণরুমের শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেই কর্মসূচির ভিত্তিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কার্যক্রম চলছে।

অন্যদিকে, বয়সের সীমা বাদ দিয়ে ‘যারা ডাকসুর ফি দেন’ এ রকম সবাইকে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি রয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর। পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে প্রচারের সুযোগ দেওয়া, হলে সন্ত্রাস বন্ধ করা এবং বৈধ ছাত্রদের মেধার ভিত্তিতে আসন বণ্টন, ডাকসুর সাবেক নেতাদেরও প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তাদের ছয় দফার মধ্যে।

ঘেরাও কর্মসূচির শুরুতে প্রগতিশলী ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবীর বলেন, অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে গিয়ে কেবল ছাত্রলীগের দাবি অনুযায়ী হলে ভোটকেন্দ্র রেখেছে প্রশাসন। অন্য ছাত্র সংগঠনের কোনো দাবি না মেনে কেবল ছাত্রলীগ যা যা বলছে তারা তাই তাই করেছে। যেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বসেছিল, ছাত্রলীগ কি বলে তা মেনে নেওয়ার জন্য। নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য ঘেরাও কর্মসূচির পর আরো কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল।

কয়েক দিনের মতো গতকালও মধুর ক্যান্টিনে আসে ছাত্রদল। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের পাশাপাশি অবস্থানে সরগরম ছিল পুরো এলাকা। দুপুরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছি না। ক্যাম্পাসে ও হলে সহাবস্থানসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে ‘শেষ পর্যন্ত’ অপেক্ষা করব। আশা করি, প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে নেবে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকীও ছিলেন মধুর ক্যান্টিনে।

জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজাহান আলী সাজু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মধুর ক্যান্টিনের মতো ক্যাম্পাসে ও হলগুলোতে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমপক্ষে ১৫ দিন পিছিয়ে দেওয়া হোক।

ছাত্রলীগ নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বাইরে প্যানেল ঘোষণা করেন বাংলাদেশ জাসদ সমর্থক সংগঠনটির এই নেতা। ২৫ সদস্যের প্যানেলে সংগঠনের ঢাবি শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান রাহাতকে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রহমান বিজয়কে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা যাবে। ভোট হবে আগামী ১১ মার্চ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close