ঢাবি প্রতিনিধি

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯

ডাকসু নির্বাচন ১১ মার্চ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণের সঞ্চার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী ১১ মার্চ হবে। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। গতকাল বুধবার গঠনতন্ত্রের ৮(ই) ধারা অনুযায়ী ডাকসুর সভাপতি হিসেবে উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান নির্বাচনের এ তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেন। পরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় এবং বিকেল সাড়ে ৪টায় উপাচার্য অফিসসংলগ্ন লাউঞ্জে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ এবং ডাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে সভা হয়। সভা শেষে উপাচার্য ডাকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেন।

এদিকে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ ঝিমিয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণের সঞ্চার করেছে। সব ছাত্রসংগঠনের নেতাদের ডেকে আলোচনা, রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, গঠনতন্ত্র সংশোধন, আচরণবিধি প্রণয়নে কমিটি এবং দুই দফায় পরিবেশ পরিষদের সভা এবং সর্বশেষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর সন্দেহ-সংশয় কেটে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান গত সোমবার ১৩টি ছাত্রসংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে দ্বিতীয় দফা পরিবেশ পরিষদের বৈঠক করেছেন। আবাসিক হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ ও ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত বিভিন্ন কমিটির সদস্যরাও সেখানে ছিলেন। প্রায় চার ঘণ্টার আলোচনায় সংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি দাবি এবং প্রশাসনের অবস্থান বৈঠকে খানিকটা উত্তাপ ছড়ায়। বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ছাত্র নেতাদের কয়েকজন। জবাবে হল প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন শিক্ষক দাবি করেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ আছে।

বৈঠকে সব ছাত্র সংগঠনের নেতারাই বলছেন, প্রশাসনের উদ্যোগে তারা নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে আস্থা পাচ্ছেন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাড়া অন্যদের শঙ্কা কাটছে না। বৈঠক শেষে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মধুর ক্যানটিন ও আবাসিক হলগুলোতে সহাবস্থান নিশ্চিত হবে, এমন একটি সিদ্ধান্ত পরিবেশ পরিষদে কার্যকর হওয়ার পরই ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। ছাত্রলীগ আমাদের মধুর ক্যানটিনে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ‘কথা দিচ্ছি, ছাত্রদল নেতাকর্মী পরিচয়ে কোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী হলে থাকলে আমরা কোনো ধরনের সমস্যা করব না। ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীসহ ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতারা গতকাল একসঙ্গে গণমাধ্যমের সামনে আসেন।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ-খালেকুজ্জামান), বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমর্থিত ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতারাও হলে সহাবস্থান, প্রার্থিতার যোগ্যতা শিথিল করা, একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করা, সভাপতি ও সহ-সভাপতির (ভিপি) ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, ডাকসু নির্বাচন হবেÑ এ নিয়ে প্রশাসনের বক্তব্যে তারা আস্থা পাচ্ছেন। কিন্তু সহাবস্থানসহ অন্যান্য বিষয় সমাধান না করে নির্বাচন হলে সেটি প্রভাবমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হবে না।

নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক : নির্বাচনে কারা প্রার্থী হতে পারবেন, কারা পারবেন না, তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে গঠিত কমিটি এরই মধ্যে তাদের মতামত দিয়ে বলেছে, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাইরে যেন প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না থাকে। তবে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংজ্ঞা সবাই নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করছেন। পরিবেশ পরিষদের সভায়ও দুই ধরনের আলোচনা হয়েছে। একপক্ষ বলছে, যারা ডাকসু ও হল সংসদের ফি দেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত শিক্ষার্থী। সে হিসেবে তারা সবাই নিয়মিত। এর মধ্যে একাধিক স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) করা শিক্ষার্থী যেমন আছেন, তেমনি সান্ধ্যকোর্সের শিক্ষার্থীরাও অন্তর্ভুক্ত থাকেন।

অপর পক্ষের মত হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার পদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী চার বছরের স্নাতক করতে ছয় বছর এবং এক বছরের স্নাতকোত্তর করতে দুই বছর সময় বেঁধে দেওয়া আছে। এর বাইরে সবাই অনিয়মিত শিক্ষার্থী। প্রশাসনের একাধিক নীতিনির্ধারকের কাছ থেকেও এ ধরনের বক্তব্য এসেছে।

ডাকসু নির্বাচনের আদ্যোপান্ত : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ডাকসু প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৪ সালে। ১৯৫৩ সালে প্রথম নির্বাচন হয়। ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাতবার ডাকসু নির্বাচন হয়। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর গত ২৮ বছরে আর এই ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। এর মধ্যে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সাত বছরে তিনবার তফসিল ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। কখনো ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন চায়নি, কখনো বিরোধী দলে থাকা ছাত্র সংগঠনের তীব্র আপত্তিসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচনের আয়োজন করেনি কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৮ সালে ডাকসুর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। ওই সময় পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী ২০ বছরে পাঁচজন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করলেও কেউ আর তেমন কোনো উদ্যোগ নেননি।

অবশ্য এর মধ্যে ডাকসু খুলে দেওয়ার জন্য একাধিকবার আন্দোলন হয়েছে। ২০১২ সালে বিক্ষোভ, ধর্মঘট, কালো পতাকা মিছিল এবং ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ তৈরি করে লাগাতার কর্মসূচিও চলে কয়েক মাস। ২০১২ সালের ২১ মার্চ হাইকোর্টে আন্দোলনকারী ২৫ শিক্ষার্থী রিট আবেদন করেন।

২০১৭ সালে আবারও শুরুতে ‘শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ ও পরে ‘ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ডাকসুর দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বামপন্থি সংগঠনগুলো ও আন্দোলনকারীরা মিলে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন। এর মধ্যে ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ওয়ালিদ আশরাফ নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকোর্সের এক শিক্ষার্থী একক অনশন শুরু করার পর থেকে ডাকসুর দাবিটি জোরালো হয়ে ওঠে। ২০১২ সালে শিক্ষার্থীদের রিট আবেদনটিতে সাড়া দিয়ে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করতে আদেশ দেন। অবশ্য আগের বছর (২০১৭) ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মুশতাক হোসেন এবং একজন শিক্ষার্থীও হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close