শাহ্জাহান সাজু

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৮

বেসিক ব্যাংকে দক্ষ এমডি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না !

অনিয়মে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে আগ্রহী কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকটির এমডি নিয়োগের জন্য দেড় মাস আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও কোনো প্রার্থী এখনো এই পদের জন্য আবেদন করেননি। অবশেষে আবারও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে দক্ষ ও ভালো এমডি পেতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু শর্তেরও পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুটি দৈনিক পত্রিকায় এমডি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পত্রিকায় ছাপানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক অথবা লিয়েনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা যাচ্ছে। এই পদে আবেদনকারীর ব্যাংকিং পেশায় সক্রিয় কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী অব্যবহিত পূর্ববর্তী পদে অথবা প্রধান নির্বাহী পদে অথবা উভয় পদে কমপক্ষে এক বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এতে বলা হয়েছে, স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। অর্থনীতি, ব্যাংকিং ও ফিন্যান্স কিংবা ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সময়সীমা হবে তিন বছর।

জানা যায়, অনিয়মে জর্জরিত এই ব্যাংকটির এমডি মুহাম্মদ আউয়াল খান গত ১৪ আগস্ট পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর থেকে পদটি খালি রয়েছে। তার পদত্যাগপত্র গত ৩০ আগস্ট বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে উত্থাপন করা হয়। কিন্তু পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ না করে বলা হয়, নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, প্রায় বছরখানেক ধরে বেসিক ব্যাংকের অর্ধেকেরও বেশি ঋণখেলাপি তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ ঋণের পুরোটা উদ্ধার করা খুবই দুষ্কর ব্যাপার। এ অবস্থায় কোনো পেশাজীবী ব্যাংকারই বেসিক ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসতে চাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ব্যাংকটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এমডি পদে নিয়োগের জন্য একজন ভালো ও দক্ষ লোককে পাওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য এমডি পদের যোগ্যতাও কিছুটা শিথিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, বেসিক ব্যাংক ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটি লাভজনক ব্যাংক ছিল। কিন্তু এরপর ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনার পর থেকেই ব্যাংকটির আর্থিক অনিয়মের সূত্রপাত ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, ওই চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ মদদে বেসিক ব্যাংকে একে একে ঘটে যায় অনেক আর্থিক কেলেঙ্কারি। এই কেলেঙ্কারিতে আত্মসাৎ করা হয় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে এ ধরনের চিত্রের তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধান কার্যালয়ের ঋণ যাচাই কমিটি বিরোধিতা করলেও বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সেই ঋণ অনুমোদন করেছে। ৪০টি দেশীয় তফসিলি ব্যাংকের কোনোটির ক্ষেত্রেই পর্ষদে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। বেসিক ব্যাংক পর্ষদের ১১টি সভায় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যার অধিকাংশ ঋণই গুরুতর অনিয়ম সংঘটনের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই ঋণের পুরোটা আদায় হওয়ার সম্ভাবনাও কম বলে অভিমত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close