নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ নভেম্বর, ২০১৮

দিনবদলের ঘোষণা দিয়েছিলাম জীবন বদলে গেছে : প্রধানমন্ত্রী

২৯৭ প্রকল্প উদ্বোধন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের শুরু করা যেসব প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ করা যায়নি, সেগুলো সম্পন্ন করে দেশকে আরো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে আবারও সুযোগ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা দিন বদলের ঘোষণা দিয়েছিলাম। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনের দিনবদল হয়েছে, মানুষের জীবন বদলে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় দেশের ৫৬টি জেলায় বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এ কথা বলেন।

এদিন প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে ৩২১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এরমধ্যে ২৯৭টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ২৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করে অস্ত্র সমর্পণকারীদের এক লাখ করে অর্থ সহায়তা দেন এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। একইদিন তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর উন্নয়নযাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ বিশ্বে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

বিদ্যুৎ উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা এবং সাক্ষরতা বাড়ানোর সব উদ্যোগ সে সময় ব্যাহত হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যা যা পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, একে একে সবাই বন্ধ হয়ে গেল। ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ। তারা হয়ে গেল সম্পদের মালিক, হাজার হাজার কোটি টাকা। যাদের জীবন শুরু হয়েছিল ভাঙা স্যুটকেস দিয়ে তারা হয়ে গেল হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে এতিমের টাকা চুরি পর্যন্ত সব ধরনের অপরাধ সে সময় করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশের মানুষ যখন একটু সুখের মুখ দেখে, তখন কিছু মানুষের মনে অসুখ সৃষ্টি হয়, কীভাবে একটি স্থিতিশীর পরিবেশকে ধ্বংস করবে, সেই চেষ্টাই করে। আগামীতে ১৫-১৬ শতাংশের নামিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমা ২১ শতাংশে নেমে এসেছে।

ইনশাআল্লাহ, আশা করি আমরা আগামীতে দারিদ্র্যসীমা ১৫-১৬ এর মধ্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হব। বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে।

যুব সমাজকে কীভাবে দেশ গড়ার কাজে ব্যবহার করা যায় সে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। হাজার হাজার প্রকল্প চলছে। যুব সমাজকে উদ্বুব্ধ করে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যর শরণ নেন বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী শেখ হাসিনা। ছাড়পত্র কবিতার চারটি পঙক্তি উদ্ধৃত করে তিনি বলেন,

‘চলে যাবÍ তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি-নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। ‘জেগেছে যুব গড়বে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার সারাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প স্থাপনে ‘দৃষ্টান্তমূলক অবদানের’ স্বীকৃতি হিসেবে প্রশিক্ষিত যুব ও যুব মহিলাদের মধ্য থেকে ২২ জন ‘সফল আত্মকর্মী’ এবং পাঁচজন যুব সংগঠককে জাতীয় যুব পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া সচিব মোহাম্মদ আব্দল্লাহ স্বাগত বক্তব্য দেন।

বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন খুব সামনে। হয়তো যেকোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। আবার আমরা জনগণের কাছে আসব, নৌকা মার্কায় ভোট আমরা চাইব। আমরা চাইব, যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে যাচ্ছি সেগুলো যেন আগামী দিনে আমরা এসে সম্পন্ন করতে পারি এবং মানুষের কর্মসংস্থান, জীবন-মানের উন্নয়ন করতে পারি- সে সহযোগিতাও আমি দেশবাসীর কাছে চাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিয়েছি। আজকে গ্রামের মানুষেরও ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে, উন্নত হয়েছে, আরো উন্নয়ন হোক সেটাই আমরা চাই। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের একটি বড় অংশজুড়ে অতীত জীবনের স্মৃতিচারণ করেন এবং কঠিন সময়ে তার পাশে থাকার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে দলের দায়িত্ব নেওয়ার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমার চলার পথ এতো সহজ ছিল না। খুনি, যুদ্ধাপরাধী, অপপ্রচার, নানাকিছু আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। বারবার মৃত্যুমুখে পড়তে হয়েছে। দেশের মানুষ ও আমার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কঠিন সময়ে কখনো গুলির মুখে, কখনো গ্রেনেড হামলা- সবসময় আমাকে ঘিরে থেকেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, তিনি হাতে তুলে তুলে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনসহ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গোপালগঞ্জ থেকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন বাগেরহাট থেকে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন উত্তরা থেকে যুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেন।

বিদ্যুতের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪ গুণ বেড়ে এখন ২০ হাজার ৪৩০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। বর্তমানে ৯২ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, যা ২০০৯ সালের পূর্বে মাত্র ৪৭ শতাংশ ছিল। আমরা একই সময়ে ২ কোটি ৩ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছি।

তিনি বলেন, সরকার ৫৩ লাখ সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে দুই কোটিরও বেশি মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে এসেছে। বর্তমানে ১৩ হাজার ৬৫৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৫৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এ ছাড়া ৭ হাজার ৪৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরো ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য টেন্ডার আহ্বানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকার ২০ হাজার ১৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যেক গৃহে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার একটি পরিকল্পনা নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম প্রধানমন্ত্রীকে স্থানীয় তাঁতীদের বোনা একটি মসলিন শাড়ি উপহার দেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় দেশের ঐতিহ্য মসলিনের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close