প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

জাতীয় ঐক্যের নামে সব দুর্নীতিবাজ এক হয়েছে

নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ শান্তিতে আছে। শুধু শান্তিতে নেই বিএনপি। আর নতুন করে যোগ হয়েছে যুক্তফ্রন্ট। তিনি বলেন, বিএনপিসহ খুনি, দুর্নীতিবাজ, সুদখোর, বাড়ি দখলকারী-সুবিধাভোগীরা জাতীয় ঐক্যের নামে এক হয়েছে। তারা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমাদের অপরাধটা কী? দোষটা কী? সরকার উৎখাত করতে হবে কেন? দেশের জন্য কী কাজটা করিনি? স্থানীয় সময় গত রোববার রাতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের হোটেল হিলটনের গ্র্যান্ড বলরুমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় প্রবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অতীতের যেকোনো সংবর্ধনায় উপস্থিতির রেকর্ড ভেঙেছে এই সংবর্ধনা।

এর আগে রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২৩ মিনিটে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে ৬ দিনের সরকারি সফরে নিউইয়র্ক পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কের লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সুশোভিত মোটর শোভাযাত্রাসহ নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন। সংবর্ধনার জবাবে প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে আর আমেরিকায় আসার সুযোগ হবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। আপনাদের আত্মীয়স্বজনদের বলবেন নৌকায় ভোট দিতে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দেশের উন্নয়ন হয়, আর অন্যরা থাকলে শুধু দুর্নীতি হয়।

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা যুক্তফ্রন্ট ও ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অপরাধটা কী? দোষটা কী? সরকার উৎখাত করতে হবে কেন? কী কারণে? কী কাজটা করিনি দেশের জন্য?

তিনি বলেন, এরা সব এক জায়গায়। কেউ সুদখোর, কেউ ঘুষখোর, কেউ মানিলন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত, কেউ খুনি। এভাবে সব আজকে এক জায়গায়। এসব দুর্নীতিবাজকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তারা লড়াই করবেন! কামাল হোসেন লড়াই করবেন? বি চৌধুরী লড়াই করবেন? মান্না লড়াই করবে?

প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসীরা দেশের দুঃসময়ে সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় তারা সোচ্চার ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্দোলন করেছেন, সর্বোপরি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে চলেছেন। তিনি ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমান পুনরায় চালু করার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুঃশাসন এবং দুর্নীতির কারণে ইমার্জেন্সি সরকার এসে প্রথমে আমাকে জেলে নিয়েছিল। সেই জেলখানায় বসেই আমি দিন বদলের সনদ তৈরি করেছিলাম। আমরা ক্ষমতায় এসে দিন বদল করেছি, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি। এবার ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। কিন্তু ডিজিটাল করে সমস্যাও হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। সেই অপপ্রচার বন্ধে এবং সামাজিক নিরাপত্তায় আমরা ডিজিটাল আইন পাস করেছি। কিন্তু সমস্যা তৈরি করছে সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না। ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের সময় অনেকেই স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করেছে। তিন দিনের মাথায় আমরা দেখলাম বিভিন্ন লেবাসে বুড়া খোকাদের। একজন ফটোসাংবাদিক সরকারের বিরোধিতায় নেমে পড়লেন। পুলিশ তাকে বুঝানো চেষ্টা করলেন, তিনি পুলিশকেও ধমক দিয়ে বললেন, আমি বলে দেব আপনারা আমাকে নির্যাতন করছেন। তখন পুলিশ উনাকে চালান করে দেয়। এখন তা নিয়ে দেশে বিদেশে হই চই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার চাচা কামাল হোসেন, তারেকের বদু কাকা (বি. চৌধুরী), এরশাদ-জিয়ার সুনজরে থেকে ডাকসুর নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, সুদখোর ড. ইউনূস, কাকরাইলে বাড়ি দখলকারী ব্যারিস্টার মঈনুল, মৃত ব্যক্তির জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে গুলশানে বাড়ি দখলকারী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদরা যুক্তফ্রন্ট করেছেন। ড. ইউনূস হিলারির সহযোগিতায় আমাদের চোর বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু কানাডার আদালত বিশ্ব ব্যাংকের সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। তিনি বলেন, বিএনপি এত দুুর্নীতি করেছে যে তারা এফবিআইয়ের অফিসার ভাড়া করেছিল সজিব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা এবং অপহরণ করতে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাই জেলে রয়েছে, তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এসব মামলা আমার সরকার করেনি। তার পছন্দের লোকজনই করেছিল।

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি। জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় থাকব, না দিলে থাকব না। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। আমার বোন রেহানা আমাকে বলেছে ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকেও খাওয়াতে পারবে না কেন?

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

মঞ্চে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান, আক্তার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী, লুৎফুল করিম, শামসুদ্দীন আজাদ, আবুল কাশেম ও মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আইরীন পারভীন প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close