নিজস্ব প্রতিবেদক
বাজেটের প্রভাব পড়েনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে
বেড়েছে মুরগি ও সবজির দাম
প্রতিবার বাজেট প্রস্তাবনার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এবার তার বিপরীত পরিস্থিতি লক্ষ করা গেছে। গতকাল শুক্রবার বাজেট প্রস্তাবের পরদিন কারওয়ান বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, অপরিবর্তিত রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। খুচরা ব্যবসায়ীদের মতে, বাজেটের প্রভাব পড়ে আড়তদার কিংবা পাইকারি ডিলারদের মাধ্যমে। তারাই দাম শুরুতে বাড়ায়। তারা না বাড়ালে খুচরা বাজারে, দোকানে কিংবা কারওয়ান বাজারের মতো পাইকারি বাজারেও দাম বাড়ে না।
কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানদার সরফরাজ বলেন, ‘বাজেট কবে হইছে, তা-ই জানি না। তবে বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে রমজানের শুরু থেকে। সম্প্রতি সব রকম ডালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। বাজেটে দাম বাড়ার কোনো খবর নেই। আমাদের কাছে এখনো আসেনি। আর দাম বাড়লে তা যোগ হবে নতুন চালানের সঙ্গে। পুরান মালের দাম আগের দামেই বিক্রি হয়।’
গতকাল বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা, আমদানি করা ২৫-৩০ টাকা। রসুন (দেশি) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি। আর বিদেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. রানা মিয়া বলেন, ধীরে ধীরে কমে আসছে পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজ যেমন পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি আমদানিও হচ্ছে প্রচুর। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দামটা কমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম কম, তাই খুচরাতেও কম দামে বিক্রি করছি।’
একই বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা আশা বেগম জানান, বাজারের অবস্থা ভালো। অন্য শুক্রবারের মতো হঠাৎ করেই কোনো জিনিসের দাম বেড়ে যায়নি। বরং কমেছে। তাই একটু স্বস্তিতে আছি। তবে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে পেঁয়াজসহ রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বাড়তে না পারে।
এ ছাড়া বাজারে ছোলা বিক্রি হয় ৬৫-৮০ টাকা কেজি, চিনি ৬০-৬২, মুড়ি ৭০-১২০, রসুন মানভেদে ১০০-১২০, খেসারির ডাল ৬০ ও মসুর ১০০-১৪০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে সবজি ও মুরগির দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি মুরগি ১০-১৫ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে। সে হিসাবে মুরগির দাম বাড়িয়ে ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। এ ছাড়া প্রতিটি সবজির কেজিতে ৫-৬ টাকা দাম বেড়েছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে মুরগি কিনতে আসা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা কেজিতে কিনেছি। আজ ১৭০ টাকার নিচে বিক্রি করছে না। বাধ্য হয়েই দোকানিদের চাওয়া দামেই কিনতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি ছাড়া দেশি মোরগ বড় প্রতিটি ৫০০ টাকা, মাঝারি ৩০০, ছোট ১৪০-১৫০ টাকা এবং কক মুরগি ১৬০-১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, সামনে ঈদ তাই এখন আর মুরগির দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এখন প্রতিদিন বাড়তেই থাকবে।
শুধু ব্রয়লার মুরগিই নয়, দাম বেড়েছে বিভিন্ন সবজিরও। সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ ২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এ সপ্তাহে তা হঠাৎ করে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, শসা, পটোল, কচুর লতি, চিচিঙ্গা ও বরবটি ৪০ টাকা, করলা, টমেটো, কচুরমুখি ৫০ টাকা, পেপে, ঢেঁড়স ও কাঁকরোল ৩০ টাকা, ধনেপাতা ৮০ টাকা, আলুর কেজি বগুড়া ৩০ টাকা এবং বড় হল্যান্ড ২৫ টাকা, লেবুর হালি ১৫ থেকে ২০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৩০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং জালি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ী নজরুল বলেন, ‘মোকামেই দাম বেশি। তারা বলছেন, অতিবৃষ্টিতে তরকারি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।’
মাছ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৩৫০, মৃগেল ১৮০, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৫০, রুই ৩০০ থেকে ৩৫০, নলা ১৮০, চিংড়ি বড় ৭৫০, ছোট ৪০০, শিং ৬০০, মাগুর ৬০০, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০, টেংরা ৫৫০, রূপচাঁদা ১ হাজার, আইড় ৫০০, ইলিশ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং চাষের কৈ ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত দামে কোথাও মাংস বিক্রি হচ্ছে না। গরুর মাংস ৫০০ টাকা কেজি ও খাসির মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
"