সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ৯ জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত সোমবার মধ্যরাতে ও গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এসব ঘটনা ঘটে। এদিকে, এসব ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের জীবন বাঁচাতে গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হচ্ছে। গতকাল সচিবালয়ে নিজ কক্ষে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকের কোনো চুনোপুঁটিদের ধরা হচ্ছে না। যাদের ধরা হচ্ছে তারা মাদকের শীর্ষ কারবারি। শতভাগ

নিশ্চিত হয়ে এবং তথ্য-প্রমাণ হাতে নিয়ে নক করা হচ্ছে। যাদের নক করা হচ্ছে তারা কখনো কখনো পালিয়ে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি ছোড়ে। তখন জীবন বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মাদক ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিচার করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, র?্যাব, সাংবাদিক যারাই মাদকের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন তাদের ছাড় নয়।’

গতকাল র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কুমিল্লায় দুইজন, নীলফামারীর সৈয়দপুরে দুইজন, চট্টগ্রামে একজন, নারায়ণগঞ্জে একজন, চুয়াডাঙ্গায় একজন, দিনাজপুরে একজন, ফেনীর ছাগলনাইয়ায় একজন, নেত্রকোনায় একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে একজন নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নিহতরা সবাই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। কারো কারো বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় নিহতের বেশির ভাগই মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করছে র‌্যাব ও পুলিশ। গতকালও সারা দেশে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়জন মারা যান। আমাদের ব্যুরো, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সৈয়দপুর (নীলফামারী) : সৈয়দপুরে পুলিশের সঙ্গে ?‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুইজন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য।

সৈয়দপুর পুলিশ জানায়, দুইজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জনি (২০) ও শাহীন (৩০) কে আটক করে সৈয়দপুর থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় গোলাহাট বধ্যভূমিতে মাদকের বড় চালান লুকিয়ে রেখেছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশ জনি ও শাহিনকে নিয়ে গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক ব্যবসায়ীরা ককটেল ছোড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। গোলাগুলি শেষে জনি ও শাহিনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) : আড়াইহাজারের সাতগ্রাম ইউনিয়নের দেয়াবৈ মেইন রোড এলাকায় গতকাল ভোরে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাচ্চু খান (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত বাচ্চু খান রাজধানী ঢাকার উত্তরার উত্তরখান এলাকার আশরাফ খানের ছেলে।

র‌্যাব-১ এর পূর্বাঞ্চল ক্যাম্পের এডিশনাল এসপি আনোয়ার হোসেন ও আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব-১ একটি বিদেশি পিস্তল ও ১০ হাজার ২০০ ইয়াবা জব্দ করে। নিহত বাচ্চু খানের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শরীফ ও পিয়ার নামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত পৌনে ১টার দিকে জেলা সদরের অদূরে বিবির বাজার অরণ্যপুর এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, একটি পাজেরো জিপ, ৫০ কেজি গাঁজা এবং ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানকালে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রূপ কুমারসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা : আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনের অদূরে গত সোমবার রাত পৌনে ২টার দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সাদু (৩৮) নিহত হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, আলমডাঙ্গা স্টেশনের পশ্চিম দিকের একটি জঙ্গলের ভেতরে ৮-১০ জন মাদক বিক্রেতা অবস্থান করছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল ওই স্থানে অভিযান চালায়। রাত দেড়টার দিকে পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে মাদক বিক্রেতারা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কামরুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রবাল হোসেন (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ কমপক্ষে ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিরামপুর থানা পুলিশ জানায়, সোমবার রাত ৩টার দিকে বিরামপুর পৌর এলাকার মনিপুর নামক স্থানে পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালালে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রবালকে উদ্ধার করে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসক প্রবালকে মৃত ঘোষণা করেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ডেবারপাড় এলাকায় গত সোমবার রাত দুইটার দিকে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক স¤্রাট শুক্কুর আলী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা, একটি ওয়ান শ্যুটারগান, তিন রাউন্ড গুলি, দুই রাউন্ড খালি খোসা এবং ৫০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। নিহত শুক্কুর আলী (৪৫)ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আউলিয়া বাজার এলাকার মুকুন্দপুর ভূঁইয়া বাড়ির মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি নগরীর শীর্ষ এই মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টির বেশী মামলা রয়েছে।

র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারি পরিচালক মিমতানুর রহমান বলেন, মাদক ব্যবসায়ী চক্র ডেবারপাড় এলাকায় অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ শুরু করে। আত্মরক্ষায় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটলেঘটনাস্থলে শুক্করের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় দুইজন র‌্যাব সদস্য আহত হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ফেনী : ফেনীর লেমুয়া নামক স্থানে সোমবার রাতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৯) নামের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার রুপকানিয়া গ্রামের হাজী আবদুল করিমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ডাকাতি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।

নেত্রকোনা : পুলিশের সঙ্গে ?‘বন্ধুকযুদ্ধে’ আমজাদ হোসেন (৩২) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি জেলা শহরের পশ্চিম নাগড়া এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে। তিনি তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া তার নামে হত্যা, বিস্ফোরক ও চুরিসহ বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে।

বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : বাঞ্ছারামপুরের সোনারামপুর এলাকায় সোমবার রাত ২টার দিকে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ধন মিয়া (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ধন মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় তিনটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

"