নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

কোনো দল নির্বাচনে না এলে কিছু করার নেই

* অপকর্ম না করলে ৩২ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই * প্রশ্ন ফাঁস নতুন কিছু না * সুষ্ঠু ভোটে আনসারকে প্রস্তুত থাকতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারও যদি কোনো দল নির্বাচনে না আসে, তাহলে আমাদের কী করার আছে? কোন দল নির্বাচন করবে, কোন দল করবে নাÑ সেটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত। কেউ যদি বলে নির্বাচন করতে দেব না, তাহলে সেটা তাদের গায়ের জোরের কথা। সময়মতো, সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন হবে। গতকাল সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ইতালি সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে সকালে গাজীপুরের সফিপুরে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব সদস্যকে প্রস্তুত থাকতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানে যেভাবে আছে, যারা জনগণের ওপর বিশ্বাস করে তারা নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে। বিএনপি গায়ের জোরে বলতে পারে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। কারণ তাদের জন্মই হয়েছিল গায়ের জোরে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছিল দুদক। আর আদালত রায় দিয়েছে। সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপিতে কি একজন নেতাও নেই, যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা যেত? যিনি মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে গেল, তাকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হলো। বিএনপিতে এখন খুব কর্মঠ নেতা দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত করা গেল না? বিএনপির চেয়ারপারসনের কি দলের কারো ওপর ভরসা নেই, যাকে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া যায়?

বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলার রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মামলা যখন শুরু হয় তখন রফিকুল হক সাহেব তার আইনজীবী ছিলেন। তখন রফিকুল হক বলেছিলেন, টাকা দিয়ে দেন, তাহলে আর মামলা থাকে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টাকা এসেছিল এতিমদের জন্য। সেই টাকা আর এতিমরা চোখে দেখেনি। কত হাত ঘুরে এই টাকা তার কাছে চলে আসে। কোরআনেও শাস্তির কথা বলা আছে। এতিমের টাকা খেলে আদালত শাস্তি দেয়, আল্লাহও শাস্তি দেন। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতিমখানার টাকা ব্যক্তিগত তহবিলে। আদালতের রায় অনুযায়ী, যা করার তা আমরা করব। এর বাইরে কিছু সম্ভব না।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে আছে ভাগ্যবতী, নিতেই পারে। অনেকে আছে, দিতেই পারে। ব্যক্তিগত সহকারী রাখার বিষয়টি নতুন না। তখন তার সঙ্গে এই গৃহপরিচারিকা ফাতেমাই ছিল। বিএনপির চেয়ারপারসনের মামলার রায়ের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কেউ ফোনও করেনি, কেউ কোনো প্রশ্নও করেনি। কিছু জানতেও চাননি। সেদিক থেকে এটি একটি ভালো লক্ষণ।

প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কিছু না। যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে। কখনো সামনে চলে আসে, কখনো আসে না। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ তৈরি করে দেয়, আবার সমস্যাও তৈরি করে দেয়। তিনি বলেন, পরীক্ষার আগের দিন তো প্রশ্ন ফাঁস হয় না। প্রশ্ন ফাঁস হয় পরীক্ষার ২০ মিনিট আগে। কার এমন ‘ফটোজেনিক মেমোরি’ আছে যে, প্রশ্ন দেখে ২০ মিনিটে সবকিছু মুখস্থ করে লিখে ফেলে?

প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস বলে একটি সুর তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই বলে মন্ত্রী, সচিবকে চলে যেতে হবে? তারা তো এটা ফাঁস করেনি। গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দেন, তাদের শাস্তি দেব। পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) বন্ধ করে দেব। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মীরা) লেখেন, আমরা বন্ধ করে দেব।

৫৭ ধারা বাদ দিয়ে নতুন ডিজিটাল আইন হয়েছে, এই আইনটি গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগ হবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইম একটি বিরাট সমস্যা। এ দেশসহ সারা বিশ্বে এ সমস্যা আছে। সিআরপিসিতে যে সমস্ত ধারা আছে, সেগুলো। আপনাদের এত ভয় কেন? কেউ যদি এমন অপরাধ করেন, তাহলে তার ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ হবে। ফৌজদারি আইন (সিআরপিসি) অনুযায়ী, কেউ অপকর্ম না করলে সেখানে অপপ্রয়োগ কেন হবে। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ করে দেয়, মাঝে মাঝে দুঃসহ যন্ত্রণাও দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার, সমস্যার সমাধানও করবে তারা। রোহিঙ্গাদের নিতে মিয়ানমার টালবাহানা করছে, এটা তাদের চরিত্র। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবেও চাপ আসছে প্রচুর। একবার যদি যাওয়া শুরু করে তাহলে স্রোতের মতো করে চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এক কোটি শরণার্থী ছিল। তারা কিভাবে চলে এসেছিল?

প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (ইফাদ) পরিচালনা পর্ষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে ইতালিতে যান প্রধানমন্ত্রী। তিনি ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রধান গুরু পোপ ফ্রানসিসের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত শনিবার রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল তার বিদেশ সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন।

এর আগে সকালে গাজীপুরের সফিপুরে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে এই বাহিনীর ৩৮তম জাতীয় সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব সদস্যকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। জননিরাপত্তা বিধানে আনসার ও ভিডিপিকে সরকারের এক ‘নির্ভরযোগ্য বাহিনী’ হিসাবে গড়ে তোলার কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আনসার বাহিনী সমগ্র বাংলাদেশে বিস্তৃত। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এই বাহিনী আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। দেশের সর্ববৃহৎ শৃঙ্খলা বাহিনী হিসাবে এই বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। আনসার সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।

এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর জাতীয় সংগীতের পর প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের জন্য আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের পদক পরিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এবং এই বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist