সরদার সিরাজ

  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭

পর্যালোচনা

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং আমরা...

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে বিশ্বের সবকিছু। এমনকি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের বাইরের গ্রহ ও নক্ষত্রেও। উপরন্তু এমন কিছু কিছু জিনিস আবিষ্কৃৃত হচ্ছে, যা আগে কখনো কল্পনাও করা যায়নি। এমনকি পরিবর্তন হচ্ছে মানুষ ও অন্য প্রাণীর মধ্যেও। এবং তা তার দেহ ও মননে। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে যে যত দ্রুত তাল মিলিয়ে চলতে পারছে বা গ্রহণ ও ব্যবহার করতে পারছে, সে তত দ্রুত উন্নতি করছে। আর যে বুঝতে পারছে না, কিংবা গ্রহণ করতে পারছে নাÑসে পিছিয়ে পড়ছে। এমনকি বিশাল পাহাড়ের গভীর খাদে পতিত হচ্ছে। সেখান থেকে সহজে উদ্ধার হতে পারবে না। পারলেও তার সঙ্গীদের খুঁজে পাবে না। কারণ, তারা ততক্ষণে চলে যাবে অন্যত্র। আর তা এই গ্রহে এবং অন্য গ্রহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অতি সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তনশীল কিছু জিনিসের বর্ণনা করাই হচ্ছে এ নিবন্ধের প্রয়াস। ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৯৯ জন ভারতীয় মঙ্গলগ্রহে যেতে চায়। নাসার ওই ইনসাইটে টিকিট বুক করেছে তারা। আগামী ৫ মে, ২০১৮ নাসার মঙ্গল গ্রহের দিকে যাত্রা করার কথা। নাসা গত ৮ নভেম্বর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যারা অনলাইনের মাধ্যমে মঙ্গলে যেতে নাম লিখিয়েছেন, তাদের বোর্ডিং পাস দেওয়া হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২ কোটি ৪২ লাখ ০৯ হাজার ৮০৭ জন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্য নাসায় নাম দিয়েছেন। তন্মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৩ জন, চীনের ২ লাখ ৬২ হাজার ০৭ জন ও ভারতের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৯৯ জন উল্লেখযোগ্য। সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরিকল্পনা মতে, ভবিষ্যতের আকাশযান হবে ‘পড প্লেন’। এটি গতানুগতিক বিমানের মতো যাত্রী ও মালামাল বহন করবে না। এটা কাজ করবে কেবল বাহন হিসেবে। যাত্রী ও মালামাল থাকবে ‘ক্যাপসুলের’ ভেতর। যার ডানা বা ওড়ার মতো ইঞ্জিন নেই। তবে গাড়ির মতো চাকা আছে। ফলে এটা সড়কেও চলাফেরা করতে পারবে। এর আকার এত বড় হবে যে বিশাল বিশাল বাস, ট্রাক, শিপ কন্টেইনার এমনকি ট্রেনের বগি পর্যন্ত এর ভেতরে ঢুকিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে উড়িয়ে নেওয়া যাবে। প্রতিটি পড প্লেন তিনটি পর্যন্ত ক্যাপসুল বহন করতে পারবে। (সূত্র : সিএনএন, ১৩ নভেম্বর, ১৭)। এই ডিজিটাল বিমান চালু হলে এনালগ যানবাহন সব বন্ধ হয়ে যাবে।

মোভিং স্টেডিয়াম! ভাবতেও অবাক লাগে। না অবাক হওয়ার মতো নয়, বাস্তব। তবে অভিনব-বিশ্বে বিরল। এটি তৈরি করা হয়েছে জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরে। এই স্টেডিয়ামে কখনো ফুটবল, কখনো আমেরিকান ফুটবল অথবা পপ কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। ছাদ ও মাঠ, দুটি অংশই প্রয়োজন মতো নাড়াচাড়া করা যায়। এখানে কৃত্রিম উপায়ে ঘাসে রোদ ফেলা হয়। শালকে ক্লাবের স্টেডিয়ামে গোটা মাঠকে নাড়াচাড়াও করা যায়। এর ধারণ ক্ষমতা ৬০ হাজার জন। বিশ্বে কোনো স্টেডিয়ামে এমন অভিনব ছাদ নেই। আবহাওয়া খারাপ হলে ফাইবার গ্লাসের তৈরি স্বচ্ছ অংশ দু’দিক থেকে স্টেডিয়াম ঢেকে দেয়। ছাদ খুলতে সময় লাগে আধ ঘণ্টা। চার হাজার বর্গমিটার ছাদের দুই অংশের সম্মিলিত ওজন প্রায় দুই হাজার টন। মাঠের বৈশিষ্ট্যও নির্মাতাদের গর্বের কারণ। বেকিং ট্রের মতো গোটা মাঠও সরিয়ে ফেলা যায়। নির্বিঘেœ নাড়াচাড়া করতে সিমেন্টের মেঝের ওপর টেফলন মোড়া স্টিল রেল বসানো হয়েছে। তার ওপর ঘাস বসানো বিশাল পাত নাড়াচাড়া করা সম্ভব। সুইচ টিপে হাইড্রলিক পদ্ধতিতে থামগুলো গুটিয়ে নেওয়া যায়। হাইড্রলিক পদ্ধতিতেই ঘাস বসানো পাত ধীরে ধীরে তার গন্তব্যে ঠেলে দেওয়া হয়। চারটি হাইড্রলিক ড্রাইভের সাহায্যে প্রায় ১১ হাজার টন ওজনের ঘাস বসানো পাত সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যেই স্টেডিয়ামের নির্দিষ্ট জায়গায় বসানো হয়। তারপর চলে তার ওপর ফুটবল খেলা। যখন কনসার্টের আয়োজন করা হয়, তখন হাইড্রলিক ড্রাইভের সাহায্যে ঘাস বসানো পাত বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গোটা প্রক্রিয়াটা অনেকটা শুঁয়াপোকার চলার মতো। আট টন ওজনের ড্রাইভের চারটি হাইড্রলিক সিলিন্ডার গোটা মাঠটিকে কার্যত উপড়ে ৭৫ সেন্টিমিটার পদক্ষেপে ঠেলে নিয়ে চলে। মোট ১৮০ মিটার দূরত্বে চূড়ান্ত অবস্থান পর্যন্ত এভাবে মাঠ সরিয়ে ফেলা হয়। সূত্র : ডয়চে ভেলে, ১৩ নভেম্বর,১৭।

‘রস ১২৮বি’ নামে দ্বিতীয় পৃথিবী আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রহটি ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি আবিষ্কার করেছে হার্পসের (হাই একুরেসি ভেলোসিটি প্ল্যানেট সার্চার) সাহায্যে। চিলিতে অবস্থিত এই অবজারভেটরি ‘দ্বিতীয় পৃথিবী’ খোঁজার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। ১৫ নভেম্বর, ১৭ ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস’ সাময়িকীতে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা তাদের এই নতুন আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন। রস ১২৮বি পৃথিবী থেকে ১১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সূত্র : সিএনএন, নভেম্বর ১৭।

ঢাকায় রোবট রেস্টুরেন্ট চালু হয়েছে গত ১৬ নভেম্বর। এতে খাবার পরিবেশন করবে দু’টি রোবট। চীনে তৈরি এই রোবট দু’টির একটি নারী ও অন্যটি পুরুষের আদলে গড়া। এর প্রতিটির ওজন ৩০ কিলোগ্রাম। উচ্চতা ১.৬ মিটার। এরা এক নাগাড়ে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে সক্ষম। প্রতিটি রোবট বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। এরা ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো ফরমাশ নেবে না। কেবল রান্নাঘর থেকে তৈরি করা খাবার নির্দিষ্ট টেবিলে পৌঁছে দেবে। এরা চলাচল করবে নির্দিষ্ট লাইন ধরে। সামনে বাধা পড়লে তারা থেমে যাবে। ইংরেজিতে অনুরোধ করবে পথ ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ধীরে ধীরে দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও রোবটের ব্যবহার বাড়বে। রোবটের ব্যবহার শুধু দেশেই বাড়বে তা-ই নয়, সারা বিশ্বেও বাড়বে এবং তা ব্যাপক হারে। ফলে কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। যেমন : ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৮০ কোটি কর্মসংস্থান চলে যাবে রোবটের হাতে। রোবোটিক অটোমেশনের কারণে চাকরি হারাবে ৮০ কোটি মানুষ। সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনজি গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে নাসার এক গবেষণা প্রতিবেদন সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কারণ, নাসার ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমবাহ ও দুই মেরুর বরফ দ্রুত গলছে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় আগামী ১০০ বছরের মধ্যে ছোট-বড় সব মিলিয়ে বিশ্বের ২৯৩টি শহর পুরোপুরি পানির নিচে ডুবে যাবে। তালিকায় চট্টগ্রাম, নিউইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও, কলম্বো, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালুরু, হংকং, সাংহাইসহ বেশ কয়েকটি মেগাসিটির নামও রয়েছে। উষ্ণায়নের জন্য পৃথিবীর সমুদ্রতল কতটা উঠতে পারে ১০ এবং ১০০ বছর পর, তার পূর্বাভাস দিতে গ্র্যাডিয়েন্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাপিং (জিএফএম) প্রযুক্তি এনেছে নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি (জেপিএল)। তার ভিত্তিতেই এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে নাসা।

লেখক : কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist