মাহফুজ আল মাদানী

  ১৬ আগস্ট, ২০১৭

ইসলাম

সৎ ব্যক্তির আবাসস্থল জান্নাত

তাকওয়া আরবি শব্দ। তাকওয়া মানে ভয় করা, বিরত থাকা, আত্মরক্ষা করা, পরহেজ করা, বেঁচে থাকা, বর্জন করা। একমাত্র আল্লাহতায়ালার ভয়ে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা এবং ভালো সব কাজ করাকে তাকওয়া বলে। আল্লাহর আদেশসমূহ পালন করা এবং নিষেধসমূহ বর্জন করাকে তাকওয়া বলে। যে তাকওয়া অবলম্বন করে তাকে মুত্তাকী বলে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবিরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে বিরত রাখে, তাকে মুত্তাকী বলা হয়। মুত্তাকী বা পরহেজগার ব্যক্তি আমানতদার, সৎ, ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী, ক্ষমাপরায়ণসহ বিশেষ ধরনের ভালো গুণে গুণান্বিত হয়ে থাকে। তাকওয়াবানদের পরিচয় প্রদান করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা অদৃশ্যের প্রতি ইমান রাখে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা আপনার ওপর যা নাজিল করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি ইমান রাখে, আর তারা আখিরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।’ (সুরা আল বাকারা : ৩, ৪)।

পরহেজগারিতা মানব চরিত্রের অন্যতম সম্পদ। ইহকাল ও পরকালের মূল ভিত্তি এটি। তাই তাকওয়ার গুরুত্ব সীমাহীন। আমাদের মহান রাব্বুল আলামীন তাকওয়া অর্জন করার জন্য আদেশ প্রদান করে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যেমন আল্লাহকে ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক।’ (সুরা আল ইমরান : ১০২)। আল্লাহকে ভয় করলে তিনি মুত্তাকীদের সঙ্গে থাকবেন বলে আশ্বস্ত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর মনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।’ (সুরা আল বাকারা : ১৯৪)।

তাকওয়ার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। আল্লামা কাজী নাসিরুদ্দিন বায়যাবি (রহ.) তিনটি স্তর উল্লেখ করেছেন। (ক) শিরক থেকে মুক্ত থাকার মাধ্যমে স্থায়ী আজাব বা শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া। (খ) প্রত্যেক গুনাহ্ বা বর্জনীয় কাজ হতে বিরত থাকা। (গ) মন মস্তিষ্ককে আল্লাহবিমুখতা থেকে মুক্ত রেখে পরিপূর্ণ আগ্রহ ও ভালোবাসা নিয়ে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করা। আর এটাই সর্বোচ্চ স্তর বা মর্যাদা। তাকওয়ার সর্বোচ্চ আসনে আসীন হতে পারলে মহান আল্লাহর কাছে বাড়বে মর্যাদা, পাওয়া যাবে তার ভালোবাসা, ক্ষমা আর সত্য-মিথ্যা নিরূপণের সক্ষমতা।

আমাদের প্রত্যেককেই তাকওয়াবান হতে হবে। তাকওয়াবান হতে পারলে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণ করার সক্ষমতা প্রদান করবেন। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তার মহিমান্বিত বাণীর ঘোষণা প্রদান করে বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে তিনি তোমাদের সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা দান করবেন এবং তোমাদের গুণাসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা আল আনফাল : ২৯)। তাকওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা, যে যত বেশি পরহেজগার সে তত বেশি আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় এবং সম্মানিত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।’ (সুরা হুজুরাত : ১৩)। আল্লাহর পছন্দনীয় হওয়াটা আমাদের কাম্য হওয়া উচিত। আল্লাহর পছন্দনীয় হতে হলে অবশ্যই তাকওয়াবান হতে হবে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা পরহেজগারদের ভালোবাসেন। আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আত তাওবাহ : ০৪)। তাই তাঁর ভালোবাসা অর্জন করতে হলে পরহেজগারিতার বিকল্প নেই। আল্লাহ ভীরুদের যে শুধু ভালোবাসেন তা নয়, তাদের সম্পর্কে আরো অনেক সুসংবাদ দিয়ে রেখেছেন। যে দিন সবাই নিজ নিজ অবস্থা নিয়ে পেরেশান থাকবে সেদিন মুত্তাকীরা হবে নিরাপদ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে।’ (সূরা আদ দোখান : ৫১)। তাদের জন্য জান্নাতের সংবাদ দিয়ে রাব্বে কারীমের ঘোষণা, ‘আর যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে রাখে নিশ্চয়ই জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।’ (সূরা আন নাযিয়াত : ৪০, ৪১)। এর চেয়ে আর বড় সুসংবাদ কী হতে পারে? তাই আমাদের অবশ্যই আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করা উচিত।

আমরা যদি আল্লাহ ভীরু হতে চাই, তাহলে আমাদের খারাপ কাজ বর্জন করতে হবে। ভালো কাজসমূহ পালনে তৎপর থাকতে হবে। ভালো কাজ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রয়েছে। তন্মধ্যে, আমাদের মধ্যে আদল বা ন্যায়পরায়ণতা থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক। এটা উঁচু মানের তাকওয়া।’ (সুরা আল মায়িদা : ০৮)। ন্যায়পরায়ণতা, সততা, ধৈর্যশীলতাসহ বিভিন্ন ধরনের উত্তম কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। এভাবে প্রত্যেক ভালো কাজসমূহে প্রতিযোগিতা করতে হবে। আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘পুণ্য তাকওয়ার কাজে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য কর। আর পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর না।’ (সুরা আল মায়িদা : ০২)।

সবশেষে এটাই বলা বাহুল্য, আমাদের ইহকাল ছেড়ে পরকালে চলে যাওয়ার আগে পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। আর উত্তম পাথেয় হলো আল্লাহভীতি। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পথের সম্বল সঞ্চয় কর। অবশ্য উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া।’ (সুরা আল বাকারা : ১৯৭)। আমাদের সমাজে তাকওয়াবানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কমে যেত অপরাধ, দুর্নীতি আর সব ধরনের অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা। আসুন আমরা আল্লাহকে প্রকৃতভাবে ভয় করে সমাজের অপরাধকে দূর করার পথে এগিয়ে যাই।

লেখক : ইসলামী গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist