পাহাড়তো নয় মৃত্যুপুরী
মৃত ১৬৫ জনের কান্নার ধ্বনি এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির পাহাড়ি ঢালের নিঃসঙ্গ ছায়ায়। এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্ত ছয় সহ¯্রাধিক পরিবারের জীবন। এর মাঝেই আবারও ঘটল পাহাড়ধসের ঘটনা। নিভে গেল একই পরিবারের পাঁচ পাঁচটি জীবন। যার মাঝে তিনজনই শিশু। সীতাকু-ের ছলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল ছলিমপুর ছিন্নমূল এলাকায় মাটিচাপায় ঝরে গেল গিনিপিগের মতো বেঁচে থাকা পাঁচটি জীবন। এ নিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ৩০ জন প্রাণ হারাল। রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও মৌলভীবাজার মিলিয়ে এ সংখ্যা ১৬৫।
পাহাড় কাটা বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া ও পুনর্বাসন করার সিদ্ধান্ত কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেই প্রশাসনের ঘুম ভাঙে। ঢাকঢোল পিটিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বৈঠক। নেওয়া হয় একাধিক সিদ্ধান্ত এবং সুপারিশ। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত প্রদীপ জ্বালাতে পারে না। অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত থেকেই বেঁচে থাকতে হয় মানুষরূপী এসব গিনিপিগকে। মৃত্যুকে ওরাও যেন নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছে। যদিও এর কোনোটাই স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। অপমৃত্যু হলেও দায় নেওয়ার কেউ নেই। ‘কী অদ্ভুত এই দেশ সেলুকাস’!
থামানোর কোনো প্রক্রিয়া যেখানে নেই, সেখানে এ মৃত্যু মিছিল কখনো থামবার নয়। দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার যোগ্যতা কোথায়! স্বেচ্ছায় অথবা চাপের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থকে যোগ করেই চলতে হয় এসব প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে। সুতরাং যা ঘটার তাই ঘটছে এবং ঘটবে। গিনিপিগরা মরবে। আর সেসব মৃতদেহের ওপরে পা রেখেই হেরেমের উষ্ণতা খুঁজে পাবেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের সম্মানিত সদস্যরা।
পাহাড় কাটা নিঃসন্দেহে একটি বড় অপরাধ। নষ্ট রাজনীতির কারণে এই অপরাধও যেন অপরাধের তালিকা থেকে ওঠে যাচ্ছে। আর সে কারণেই চলছে পাহাড় নিধনের মহাযজ্ঞ। পাহাড় ও নদীকে আমরা জাতীয় সম্পদ হিসেবেই জানি। এগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মালিকানা না থাকার পরও পাহাড়ে জমি বেচাকেনা হচ্ছে। কিভাবে হচ্ছে, তা প্রশাসনের জানার কথা, আমাদের নয়। আমরা যেটুকু জানি তাহলো, আমরা মানুষকে আর গিনিপিগের মতো মরতে দেখতে চাই না। মানুষের মর্যাদা নিয়ে মানুষ মৃত্যুবরণ করবে আর সেই স্বাভাবিক মৃত্যুই আমরা দেখব-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"