সীমান্ত প্রধান

  ১৫ জুলাই, ২০১৭

মতামত

‘পেডোফিলিয়া’

শিশুদের প্রতি যৌন-নির্যাতনের কথা আমরা প্রায়ই শুনি। নির্যাতিত এই শিশুদের মধ্যে শুধু মেয়েশিশু নয়; ছেলেশিশুও রয়েছে। আর যৌন-নির্যাতনকারী কেবল পুরুষ, তাও কিন্তু নয়, এখানে নারীও রয়েছে। তবে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যাই অধিক। এ-সংক্রান্ত অনেক সিনেমাও নির্মিত হয়েছে দেশ-বিদেশে। এ ছাড়াও যৌন নির্যাতন থেকে শিশুদের রক্ষা করতে এবং তাদেরসহ তাদের পরিবারের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন দেশে এই নিয়ে ওয়ার্কশপও করা হয়।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, যারা শিশুদের প্রতি যৌন আকৃষ্ট হয় বা তাদের সঙ্গে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয় কিংবা হতে চায়, তারা ‘পেডোফিলিয়া’ আক্রান্ত। এটা মূলত এক ধরনের যৌন-বিকৃত মানসিক রোগ। এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা বরাবরই শিশুদের প্রতি আকৃষ্ট থাকে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধি ঘটেনি এমন শিশুদের প্রতিই তাদের আগ্রহ বেশি। আর এরা খুব সহজেই শিশুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। শিশুরাও তাদের কথা বা দুষ্টুমিতে সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এরা শিশুদের নানা ধরনের উপহারসামগ্রী দেওয়াসহ তাদের সঙ্গে গল্প করে এবং কখনো এদিক-সেদিক ঘুরতে বের হয় কিংবা আলাদাভাবে গল্প করে।

পেডোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা আমাদের আশপাশে অনেক রয়েছে। হয়তো আমরা বুঝি না। আবার আঁচ করতে পারলেও লোকজ্জায় এই নিয়ে কথা বলি না। কখনো কখনো এমনও হয় যে, পেডোফিলিয়া আক্রান্তদের বিকৃত যৌন হয়রানির কথা শিশুটি ঠিকই বলছে, কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না কিংবা পাত্তা দিচ্ছি না, যা আমাদের অসচেতনতা। তবে পাত্তা না দেওয়ার পেছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে, পেডোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশ আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কিংবা খুব ভালো কোনো প্রতিবেশী হয়ে থাকেন। সে যাই হোক, মোদ্দাকথা হচ্ছে, একজন পেডোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি দ্বারা একটি শিশু যখন ‘সেক্সচুয়াল এবিউজ’ হয়, তখন আক্রান্ত শিশুটির স্বাভাবিক জীবনধারা ব্যাহত হয়। শিশুটি মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। কখনো কখনো এরা বড় হলে সন্তান ধারণ ক্ষমতা বা যৌন-আগ্রহ হারায়। মূল কথা সেক্সচুয়াল এবিউজের শিকার শিশুরা সমাজে আট দশজন শিশুর মতো বেড়ে উঠতে পারে না। তারা অনেকাংশে একা একা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মানুষজনের মাঝে মিশতে পারে না, যেতেও চায় না। অর্থাৎ এবিউজের শিকার একটি শিশুর জীবনের গতিপথ স্বাভাবিক ধারায় প্রবাহিত হয় না। তারা নানা সময়েই আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এদের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা কাজ করে সব থেকে বেশি। বিশেষ করে মানুষকে তারা সহজেই বিশ্বাস করতে পারে না।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজ ঘরেও শিশুরা সেক্সচুয়াল এবিউজ হচ্ছে চাচা-মামা-খালু-দাদা-নানা-আন্টিদের মতো আত্মীয়-স্বজন দ্বারা। এ ছাড়াও গ্রাম থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসা দূরসম্পর্কের কোনো আত্মীয় দ্বারাও শিশুরা সেক্সচুয়াল এবিউজ হয়ে থাকে। এর ফলে ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে যাবে, শিশুটিও হঠাৎ করে কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে! চোখের সামনেই সে বদলে যাচ্ছে! তারপরও শিশুটি বলতে পারছে না তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেক্সচুয়াল এবিউজের কথা।

এবিউজের শিকার শিশুটির যথাযথ কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেক অভিভাবকই তেমন কাউন্সিলিং করানোর চেষ্টা করে না। এমনকি পেডোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধেও কোনো রকম আইনি বা পারিবারিক পদক্ষেপ নিতে চান না, যার মূলে থাকে সামাজিকভাবে সম্মানহানির অজুহাত। অথচ অভিভাবকদের এমন নীরবতায় পেডোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি একের পর এক ‘চাইল্ড এবিউজ’ করে যাচ্ছে। এতে করে আমরা অজান্তেই আমাদের সন্তানদের আলোকিত ভবিষ্যৎটাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিচ্ছি। অথচ পরিবারের সচেতনতাই পারে শিশুদের ‘সেক্সচুয়াল এবিউজ’ থেকে রক্ষা করতে। শিশুদের জানাতে হবে কোনটি ‘এড়ড়ফ ঞড়ঁপয’ এবং কোনটি ‘ইধফ ঞড়ঁপয’। তাদের বোঝাতে হবে তার শরীরে কোথায় স্পর্শ করলে ‘এড়ড়ফ ঞড়ঁপয’ এবং কোথায় স্পর্শ করলে ‘ইধফ ঞড়ঁপয’। সেই সঙ্গে তাকে জানাতে হবে, কেউ যদি তোমাকে খারাপ স্পর্শ করে, তাহলে সে যেই হোক, তার থেকে সরে আসতে হবে এবং তার কাছে আর যাওয়া যাবে না। আর যদি নিজেকে তুমি সরিয়ে আনতে না পার, তবে জোরে চিৎকার দিতে হবে। এবং এমন আচরণ যদি কেউ করে থাকে, তাহলে অবশ্যই বাবা-মায়ের মধ্যে যাকে বেশি পছন্দ কর, তাকে কথাটা জানাতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পেডোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হলে, তাদের সেক্সচুয়াল এবিউজ থেকে নিরাপদ রাখতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা। একমাত্র পরিবারের সচেতনতাই শিশুকে সেক্সচুয়াল এবিউজ থেকে রক্ষা করতে পারে। নানাভাবে খেলার ছলে তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বিশেষ বিশেষ অঙ্গগুলো সম্পর্কে তাদের মধ্যে ধারণা দিতে হবে। এবং এসব বিশেষ স্থানে কাউকে কখনই স্পর্শ করতে দেওয়া যাবে না। এসব স্থানে যারা হাত দেবে বা দিতে চাইবে তারা ভালো মানুষ নয়; মন্দ। তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে, এমন শিক্ষাটা শিশুদের দিতে হবে। আর সে দায়িত্ব প্রতিটি অভিভাবকের।

লেখক : কবি ও সাংবাদিক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist