দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ১৪ জুলাই, ২০১৭

প্রবাল দ্বীপ

হুমকির মুখে সেন্টমার্টিন

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত একটি ছোট্ট দ্বীপ সেন্টমার্টিন। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকন ও ভ্রমণের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা। বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে এবং টেকনাফ থেকে নয় কিলোমিটার দক্ষিণে এর অবস্থান। আরবের কিছু নাবিক ২৫০ বছর আগে এটি আবিষ্কার করেন। তারা এটিকে ‘জাজিরা’ বলে ডাকতেন। ব্রিটিশ শাসনের সময়কালে এটিকে ‘সেন্টমার্টিন’ দ্বীপ ঘোষণা করা হয়। দ্বীপটির স্থানীয় নাম নারিকেল জিনজিরা।

এটিই বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। আয়তন আট বর্গকিলোমিটার। ২০০৬ সালের হিসাব অনুযায়ী এর জনসংখ্যা সাত হাজার। ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৭৫ জন।

এ দ্বীপের বাসিন্দারা প্রাথমিকভাবে মাছ ধরাকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এখানকার লোকদের প্রধানতম শস্য হলো ধান ও নারিকেল। এখানে প্রচুর পরিমাণে শ্যাওলা পাওয়া যায়। এগুলোকে শুকিয়ে সংগ্রহ করে মিয়ানমার পাঠানো হয়। অক্টোবর ও এপ্রিলে পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা দ্বীপের অস্থায়ী মার্কেটগুলোতে তাদের ধরা মাছ বিক্রি করার উদ্দেশ্য নিয়ে সমবেত হন। দ্বীপের মধ্য ও দক্ষিণের এলাকা মূলত কৃষিজমির অন্তর্গত। এখানে অধিকাংশ খাবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্য ভূখন্ড থেকে রফতানি করা হয়। যোগাযোগ, আশ্রয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সরবরাহ না থাকায় এবং বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে বেশ দূরে অবস্থানের দরুণ বর্ষাকালে এখানকার জনগণের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।

বর্তমানে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ঘূর্ণিঝড়, জোয়ারের প্লাবন আর সাগরের ঢেউয়ে অনিন্দ্য সুন্দর এই প্রবাল দ্বীপে বিস্তৃত হয়েছে ভাঙনের থাবা। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নয়নাভিরাম এই দ্বীপটি। অসংখ্য গাছপালা ধ্বংস হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে। ধ্বংস হয়েছে ঘরবাড়ি স্থাপনা। সে ক্ষতির পর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আঘাত হেনেছে টানা বৃষ্টিপাত। সেন্ট মার্টিনে জেলেদের আনাগোনা ছিল শত শত বছর আগেও। এ দ্বীপে মানুষের স্থায়ী বসবাস শুরু প্রায় ২০০ বছর আগে। গত দুই শতাব্দীতে এ রকম ভাঙন কোনো সময় দেখা যায়নি। জোয়ারের পানি আর সমুদ্রের ঢেউয়ে দ্বীপের চারপাশে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম অংশে ভাঙনের ব্যাপকতা বেশি। ঘূর্ণিঝড়ে বিস্তীর্ণ কেয়া বন সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের একমাত্র কবরস্থানটির দেড়শ ফুটেরও বেশি সাগরে তলিয়ে গেছে। মাটি সরে যাওয়ায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িসহ আশপাশের কয়েকটি স্থাপনার সীমানাপ্রাচীর ভেঙে পড়ার উপক্রম। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে সাগরপাড়ে রোপিত বৃক্ষরাজি ভেঙে যাওয়ায় লোকালয়ে পানি প্রবেশের পথকে সুগম করেছে।

দ্বীপবাসীর আশঙ্কা, সেন্ট মার্টিন রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া না হলে হয়তো এ প্রবাল দ্বীপ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। ৮ দশমিক ৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ প্রবাল দ্বীপে আট হাজার মানুষের বসবাস। দ্বীপবাসী নিজেদের স্বার্থেই ভাঙন রোধে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছেন। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষায় ভাঙন রোধে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। প্রবাল দ্বীপের ক্ষতি হয় এমন অবিবেচক কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাগরপাড়ে ব্যাপক হারে বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশ রক্ষায়ও নিতে হবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। সেন্ট মার্টিনে নতুন করে হোটেল-মোটেল যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়টিও নজরে রাখা দরকার। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটনের স্বর্গ হিসেবে বিবেচিত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে। এ প্রবাল দ্বীপের সবুজ গাছপালা ও জীববৈচিত্র্য পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ বলে বিবেচিত হয়। এ আকর্ষণের জন্যই দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিনই সেখানে ছুটে যায় শত শত সুন্দরপিপাসু মানুষ।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist