reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭

শিশুশ্রম

চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা

মো. ওসমান গনি

শিশুশ্রম আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আজও আমাদের দেশে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। শিশুশ্রম বন্ধের জন্য আমাদের দেশে আইন আছে। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় দেশে শিশুশ্রমের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্মরণ রাখতে হবে, শিশুরা শ্রমের হাতিয়ার নয়, জাতির ভবিষ্যৎ; শিশুদের হাতে ভিক্ষার থলে নয়, চাই বই ও কলমÑএ কথাগুলো আজ শুধুই বইয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ। তারা আজ বিভিন্ন কাজে শ্রম বিক্রি করেও প্রকৃত মজুরি থেকে বঞ্চিত। শিশুদের অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে আসছে। বিদ্যালয়ে না গিয়ে জীবিকা নির্বাহের কাজ করছে। অল্প বয়সেই অভাব-অনটনে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে তারা। যে বয়সে তাদের স্কুলে গিয়ে হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা, সেই বয়স থেকে ধরতে হচ্ছে তাদের অভাবী সংসারের হাল। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাসমান অধিকাংশ শিশু অভিভাবকের কাজে সহযোগিতা করা ছাড়াও মোটর, রিকশা ও সাইকেল নির্মাণের কাজ, বিদ্যুৎ, ইটভাটা, চায়ের দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ, রাজমিস্ত্রির সাহায্যকারী, ওয়েল্ডিং কারখানা, গার্মেন্ট, জুট মিল এবং কৃষিসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার ফলে ওদের শারীরিক গঠন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটে। আবার তারা অনেক সময় পঙ্গুও হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু শ্রমিকের বয়স ৫ থেকে ১৪-১৫ বছর। তারা সারাদিন কাজ করে দিনের শেষে ১৫ থেকে ৫০-৬০ টাকা কিংবা মাস শেষে ৫০০-৬০০ টাকা পেয়ে থাকে, যা তাদের শ্রম এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। আমাদের দেশে এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী লোক রয়েছে, যারা শিশুশ্রম সস্তা হওয়ায় তাদের প্রতিষ্ঠানে শিশুদেরকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকে কাজ করার জন্য।

এদিকে, প্রতিদিনই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত শিশু শ্রমিকরা। অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অকালে প্রাণও হারাচ্ছে অনেক শিশু।

দেশে এ সংক্রান্ত আইন থাকলেও তাদের দারিদ্র্য, অশিক্ষা তথা পরিবারের দুর্বলতা এবং ঘটনা গোপন থাকায় অনেক সময়ই বিচার হয় না। কর্মরত শিশু, শিশুশ্রম, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে। ১৮তম শ্রম পরিসংখ্যানবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং ২০১৩-এর সংশোধন অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে বোঝায়Ñ ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের, যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। এই শ্রম অনুমোদনযোগ্য। তবে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু যদি কোনো ধরনের ঝুঁকিহীন কাজও করে, তাহলে সেটা শিশুশ্রম হবে। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৭.৪ মিলিয়ন শিশু কাজে নিয়োজিত। এর মধ্যে ৪.৭ মিলিয়ন শিশুর বয়স ৫ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে এবং ১.৩ মিলিয়ন শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। শিশুশ্রম বন্ধে প্রকৃত সমাধান বের করতে হবে। পরিবারের কর্মক্ষম অভিভাবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, শিশুদের ফ্রি চিকিৎসা ও লেখাপড়ার সমস্ত খরচ বহন, অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছাড়াও শিশুদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা যদি পথশিশুসহ কর্মরত শিশুদের কল্যাণে প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষিশিক্ষা প্রদান করতে পারে, তাহলে এসব শিশু অল্প মজুরিতে শ্রম বিক্রি না করে স্বাবলম্বী হতে পারবে। ওদের কারিগরি ও কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে।

সরকার প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ২০২১ সালের মধ্যে দেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন হবে আশা করা যায়। আর ২০২৫ সালের মধ্যে নিরসন হবে সব ধরনের শিশুশ্রম। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ এবং যথাযথ বাজেট বরাদ্দ করা হলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। শিশু অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তেমনি দারিদ্র্য দূরীকরণে আরো মনোযোগী হতে হবে। সবাই মিলে শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে একটি সুন্দর দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল হবে। দেশ এবং জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারবে এবং শিশুশ্রমের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে। আমাদের দেশে শিশুশ্রম বন্ধের যে আইন আছে, তার সঠিক প্রয়োগ করলে এবং শিশুশ্রম বন্ধের জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালে দেশের শিশুশ্রমের পরিমাণ অনেকটা কমে আসবে বলে দেশের বিজ্ঞ মহল মনে করে। তাছাড়া যেসব মিল-ফ্যাক্টরি এবং ব্যক্তি শিশুদেরকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকে, তাদের ব্যাপারে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নিলেও শিশুশ্রম অনেকটা হ্রাস পেতে পারে। আইন করে আমাদের দেশের শিশুদের শ্রম বন্ধ করার পাশাপাশি দেশের সব অভিভাবককে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য শিশুশ্রম বন্ধ করে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। শিশুরা লেখাপড়া শিখে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠলে তারা দেশের জাতীয় সম্পদে পরিণত হবে। শিশুদের অভিভাবকদের সারা জীবনের পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

E-mail : [email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist