সাইবার অপরাধ বন্ধে নজরদারি জরুরি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের এক সেতুবন্ধ। অবস্থানগত দূরত্বের ফারাক গুচিয়ে মুহূর্তেই কাছে টেনে নেয়। বিনিময় হয় ভাবের আদান-প্রদান থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় নানা বিষয়। কিন্তু কুচক্রী মহল নিজেদের স্বার্থে সামাজিক মাধ্যমগুলোর অপব্যবহার করছে। নানা রকম গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ইতিহাস বিকৃতিসহ উদ্ভট ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জনমন বিষিয়ে তুলছে। শুধু তা-ই নয়, তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তা ব্যবহার করে নিত্যনতুন অপরাধও বাড়ছে। আবার মার্জিত যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অধিকাংশের প্রযুক্তিগত জ্ঞানই নেই। ফলে ফেসবুক-ইউটিউব ঘিরে সাইবার অপরাধ বেড়েই চলেছে। এই প্রবণতা যেভাবেই হোক রোধ করতে হবে।
গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্যে নজরদারি বাড়ছে’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনে বিষয়টির উল্লেখ করে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধের বড় অংশই হচ্ছে কাউকে হেয় করে ছবি, মন্তব্য বা পোস্ট। শুধু কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য নয়, ফটোশপে কারসাজি করে বানানো আপত্তিকর ছবি দিয়েও হেয় করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে হেয় করতে মিথ্যা ও ভুয়া খবরও ছড়ানো হয়। এ রকম বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠেকাতে ফেসবুক-ইউটিউব নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব গুজব-উসকানি ঠেকাতে সক্রিয় রয়েছে ‘সাইবার পুলিশ’। আমরা দ্রুত এর প্রতিকার চাই। কারণ সস্তা জনপ্রিয়তা ও ভিউ বাড়াতে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে ইউটিউব কনটেন্ট নির্মাতারা। এসব ভিডিও কন্টেন্টে ব্যক্তিবিশেষের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহুল জনপ্রিয় পণ্য সেবা কিংবা প্রতিষ্ঠান। কোনো নামিদামি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ভিডিও বানিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশ করলেই সেগুলো ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব ভিডিও সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই তা দেখছে এবং শেয়ার দিচ্ছে। আর এমন সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে টাকা আয় করছেন তথাকথিত ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মালিকরা। এতে নামিদামি কোম্পানির নামে সত্য-মিথ্যামিশ্রিত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ভিউ বাড়িয়ে নিজেরা লাভবান হলেও ক্ষতির শিকার হয় দেশীয় শিল্প। ক্ষুণœ হয় দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম। এমনকি এসব বিভ্রান্তিকর ভিডিও দেখে ব্যবহারকারী বা ভোক্তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হয় নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব। তাই ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রকাশের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দুই বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি শুরু করেছে ‘সাইবার পুলিশ’। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের বিশেষায়িত এই ইউনিটটি বেশ দক্ষতার সঙ্গে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করছে। আমরা আশা করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ডেটা চুরি ও তথ্যপ্রবাহে বিঘœ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এর কোনো বিকল্প নেই। সাইবার অপরাধ বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজরদারির পাশাপাশি আরো সতর্ক হতে হবে আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"