reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩১ জুলাই, ২০২০

ঈদে জাগ্রত হোক ভ্রাতৃত্ববোধ

‘ঈদ মানে আনন্দ’ এ কথা ধ্রুবতারার মতো সত্য। ঈদ এলেই আনন্দে মেতে ওঠে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদ এসেছে ঠিকই, কিন্তু নেই কোনো সেই আমেজ। রং হারিয়ে ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে এবারের ঈদ। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফিরতে পারছেন না প্রিয়জনরা তাদের প্রিয় মানুষের কাছে। আবার অনেকেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নাড়ির টানে ঘর অভিমুখে ছুটে চললেও তাদের মধ্যে কাজ করছে উদ্বেগ। এবার যেন ঘরে ফেরা আনন্দের নয়, বিষাদের সুর তোলে। ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে এভাবে অবাধ বিচরণের ফলে ঈদ পরবর্তী করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

প্রতি বছর ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশু ও চামড়া কেনা-বিক্রিসহ যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সৃষ্টি হয়, এবার সে জায়গাতে ধস নামার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে কেউ চাকরি হারিয়েছেন, আয় কমেছে বেশির ভাগ মানুষের। কেউ কেউ সাধ্য থাকলেও স্বাস্থ্যগত বিষয় বিবেচনা করে পশু কোরবানি করছেন না। সব মিলিয়ে খামারি এবং গ্রামবাংলার অনেক পরিবার পশু বিক্রি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

প্রতি বছর ঈদ কেন্দ্র করে পোশাকশিল্পের যে রমরমা বাণিজ্য হয়, এবার সে জায়গাতেও নেমে এসেছে ধস। বাহারি নকশার জামা আগের মতো আর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে না। করোনা সংক্রমণের মধ্যে বন্যা এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। দেশের ৩১ জেলায় বন্যা এবং করোনাভাইরাস একসঙ্গে মোকাবিলা করাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরও ঈদ এসেছে, মানুষ তার সাধ্যমতো ক্ষমতার অধীনে থেকে পালন করবে তাদের পবিত্রতম উৎসব ঈদুল আজহা।

আবার ঈদের নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা। ঈদগাহ ময়দানে বা খোলা মাঠে নামাজ আদায় করা যাবে না এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজ আদায়ের পর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কোলাকুলিও করা যাবে না। সব মিলিয়ে এ যেন ফেলে আসা সেই ঈদ নয়। যার ঘর বন্যার পানিতে বিলীন তার কাছে ঈদ যেন না পাওয়া বেদনর মতো। গার্মেন্টকর্মী ছেলেটি আর মায়ের জন্য নতুন শাড়ি কিনতে পারে না। কারণ তার চাকরি নেই। কৃষক বাবার ঘরে খাদ্য নেই, সব ফসল বন্যায় নষ্ট। একমাত্র সম্বল গরুটি যখন বিক্রি হয় না, তখন বাবা তার মেয়েকে দেওয়া কথা রাখতে পারেন না। আর যাদের সার্মথ্য আছে, তারাও ঈদ আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন না। ভার্চুয়ালি গল্প, শুভেচ্ছা ও উপহার দিয়ে একটা নিরানন্দময় ভার্চুয়াল ঈদ উপভোগ করবেন। তবে থেমে থাকবে না ঈদের পথচলা।

ঈদের অর্থ যদি কোরবানি হয়, তবে সে কোরবানি প্রেমের জন্য। মহান আল্লাহর প্রতি প্রেমের নিদর্শন হিসেবে হজরত ইব্রাহীম (আ.) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকেই আমাদের ওপর নাজেল হয় পশু কোরবানির নির্দেশ। আর এই কোরবানি প্রতিটি সচ্ছল মানুষের জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে। আমরা এই পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে শিখেছি প্রেমের মহিমা। জেনেছি কতটা গভীরে পৌঁছাতে পারলে প্রেম তার সার্থকতায় পৌঁছাতে পারে। আমরা মনে করি, প্রেমের এই মহিমা সবার মাঝে প্রতিষ্ঠিত হলে কোরবানি সার্থক হবে। জাগ্রত হবে ভ্রাতৃত্ববোধ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close