reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

মানবতা অমান্যতার ন্যায়বিচার হোক

দুর্বলদের ওপর সবলদের নিপীড়ন নতুন কিছু নয়। আদিকাল থেকে আজ অবধি তা অব্যাহত আছে। তবে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার কৌশলগত দিকের পরিবর্তন হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিপীড়নের মাত্রা অতীতের সব সময়কে অতিক্রম করেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে মানুষের ওপর নিপীড়ন অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে অবস্থান করছে। তবে এ কথা সব সময়ের জন্য সত্য যে, নিপীড়ন, নিষ্পেষণ, অনাচার, অত্যাচারের সবটুকুই মুখবুজে সহ্য করতে হয়েছে সমাজের সাধারণ মানুষকেই। ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, মিয়ানমারসহ বিশ্ব মানচিত্রের দিকে তাকালে যে চিত্র ভেসে আসে; তা কেবল দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, নিপীড়ন আর নিষ্পেষণের রক্তাক্ত ক্যানভাস। তবে যুগে যুগে সবসময়ই প্রতিবাদ হয়েছে। হয়েছে বিদ্রোহ। প্রতিবাদ আর বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই এগিয়েছে সভ্যতা।

সম্প্রতি রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) করা মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ বিচারের রায় পেতে কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে। তবে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দিতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আইসিজে মিয়ানমারকে অন্তর্বর্তীকালীন কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। নির্দেশনা না মানলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। কারণ হিসেবে এখানে উল্লেখ করা যায় যে, মিয়ানমার ১৯৫৬ সালে জাতিসংঘের গণহত্যা সনদে সই করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো দেশ আইসিজের কোনো নির্দেশনা অমান্য করে চলতে পারে না। ফলে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে আইসিজের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য। গত ১১ নভেম্বর ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলাটি করে।

গণহত্যার অভিযোগের পাশাপাশি গাম্বিয়া আদালতের কাছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য কিছু অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। এদিকে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় গণহত্যার অভিযোগে যুগোসøাভিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালের ২০ মার্চ মামলা হয়েছিল। একই বছর ৮ এপ্রিল আইসিজে যুগোসøাভ সরকারকে বসনিয়ার মুসলমানদের সুরক্ষায় বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে নেদারল্যান্ডসের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গাম্বিয়ার মামলায় একই রকম সিদ্ধান্ত দিতে পারে আইসিজে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণহত্যা সনদের রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে আইসিজে যে রায় ঘোষণা করবেন, তা এড়িয়ে চলার ক্ষমতা নেই মিয়ানমারের। আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে রায় দেবেন, মিয়ানমার তা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়েছে। আদালতে মামলার রায় কোনোভাবেই শরণার্থীদের বিপক্ষে যেতে পারে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। আমরা ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করি। বিশ্ববিবেক সত্য, সুন্দর এবং মানবতার পক্ষে থাকবে এবং সভ্যতার দাবিদার এই পৃথিবী গর্বের সফঙ্গ বলতে পারবেÑ জয় মানবতার জয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close