reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ নভেম্বর, ২০১৯

সততার বিরল দৃষ্টান্ত

অনেকেই বলে থাকেন, জাতি হিসেবে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল চরিত্র থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছি। কথাটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। আবার সত্য হিসেবে মেনে নেওয়াটাও সম্ভব নয়। যারা হারানোর পক্ষে, তাদের উদ্দেশে বলা যায়, জাতি হিসেবে আমরা এখনো স্বীয় চরিত্র বজায় রেখে বিজাতীয় চরিত্রের অনৈতিক কর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এখানে একটি কথা মনে রাখা খুবই জরুরি যে, দেশের মোট জনসমষ্টির কত অংশ গৌরবোজ্জ্বল চরিত্র থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে? আমরা মনে করি, অংশটি অতি নগণ্য। ১৭ কোটি মানুষের দেশে এদের সংখ্যা সম্ভবত ৩২ লাখের বেশি নয়। অর্থাৎ ২ শতাংশেরও কম। এদের অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে আজ দেশের চরিত্রের ওপর কালিমা লেপণ করা হচ্ছে। দায়ভার বহন করতে হচ্ছে গোটা দেশ ও জাতিকে।

সংখ্যায় কম হলেও এদের হাত অনেক লম্বা। ধরাকে এরা সরা জ্ঞান করে থাকেন। টাকার গরমে দেশের সবকিছুই এদের হাতে তালুবন্দি। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ওপর ছড়ি ঘোরানোই এদের কাজ। এরা সততার ধার ধারে না। স্বার্থসিদ্ধির জন্য এরা যেকোনো অপকর্ম করতে পিছপা হয় না। মানবিক বোধের বাইরে এদের বসবাস। আর সীমাহীন অর্থ কষ্টের মাঝে বসবাস করেও বাকিরা মানবিক বোধকে লালন করেন নিজের অস্তিত্বে। এরই এক জীবন্ত উপমা এক রিকশাচালক ও কুড়িয়ে পাওয়া ২০ লাখ টাকা। ঘটনাটি গত শুক্রবারের। বগুড়ায় ভুল করে রিকশায় ফেলে যাওয়া ২০ লাখ টাকাভর্তি ব্যাগ ফেরত পেয়েছেন এক সার ব্যবসায়ী। সকাল ৭টায় শহরের জলেশ্বরী তলা থেকে সার ব্যবসায়ী রাজীব প্রসাদ রিকশায় সাতমাথায় নামেন। এ সময় তার কাছে থাকা ২০ লাখ টাকার একটি ব্যাগ ভুলে রিকশায় ফেলে যান। ব্যাগটি নিয়ে শহরের মালগ্রাম মধ্যপাড়ার মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে রিকশাচালক লাল মিয়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে টাকার মালিককে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে টাকার মালিককে খুঁজে না পেয়ে লাল মিয়া টাকাগুলো বাড়িতে রেখে আবার টাকার মালিক রাজীব প্রসাদের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। এদিকে থানা পুলিশ খোঁজ করার একপর্যায়ে সিসি ক্যামেরা থেকে রিকশাচালক লাল মিয়ার ছবি সংগ্রহ করে। অতঃপর অন্যান্য রিকশাচালকের সহায়তায় তার মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করার পর যোগাযোগ করলে লাল মিয়া জানান, টাকা তার হেফাজতে আছে। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে টাকার মালিক রাজীব প্রসাদকে তার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশে সততার এক প্রতীকের নাম লাল মিয়া। লুটেরা পুঁজির দৌরাত্ম্যের যুগে এটি একটি বিরল দৃষ্টান্তও বটে। তবে কতিপয় দুর্বৃত্ত ছাড়া গোটা জাতি লাল মিয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বলীয়ান। যে চরিত্র সব ধরনের লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে গর্বের সঙ্গে বলতে পারে, ‘এ দেশ লালন, হাসন আর বারো আউলিয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বেড়ে ওঠা এক পবিত্র পাললিক ভূমি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close