অটোরিকশার ভাড়া নিয়ন্ত্রণ জরুরি
রাজধানীতে অটোরিকশাচালকদের নৈরাজ্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। মিটার থাকা সত্ত্বেও চালকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চুক্তিতে যেতে চান। অন্যথায় তারা যেতেই চান না। পরিতাপের বিষয়, বিগত দেড় দশকেও এই বাহনটিকে যাত্রীবান্ধব করা যায়নি। ফলে পরিস্থিতির শিকার যাত্রীরা চালকদের নৈরাজ্যের বিষয়টা একভাবে মেনেই নিয়েছেন। কারণ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে অভিযোগ করেও কার্যত কোনো প্রতিকার মেলে না। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীতে চলাচলকারী ৯৮ শতাংশ অটোরিকশাই চুক্তিতে চলে। যদিও অটোরিকশাগুলোর জন্য মিটারে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবু চালকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। বরং মিটারে গেলে যে ভাড়া আসবে যাত্রীদের কাছ থেকে তার চেয়ে ডাবল ভাড়া আদায় করেন, যা রীতিমতো বিব্রতকর।
প্রসঙ্গত, যাত্রীদের সহজ চলাচলের জন্য ২০০২ সালের শেষ দিকে রাজধানীতে অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়। এরপর এই খাতটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়। নীতিমালাটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। তাই অটোরিকশায় চলাচল করতে গিয়ে কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করা যায় সংস্থাটিতে। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, অভিযোগ পেলে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেন। কিন্তু এর পরও অটোরিকশাচালকদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বরং তাদের বেপরোয়া মানসিকতার কারণে যাত্রীদের প্রায়ই হয়রানির শিকার হতে হয়। বলা প্রয়োজন, ২০১১ সালে সরকার সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া বাড়িয়ে কিলোমিটারপ্রতি ৭ টাকা ৬৪ পয়সা এবং বিরতিকালীন ১ টাকা ৪০ পয়সা করে দেয়। পরবর্তীকালে ২০১৫ সালে ভাড়া ও জমা বাড়ানো হয়। তখন অটোরিকশার জমা ৯০০ টাকা এবং যাত্রীদের জন্য প্রথম দুই কিলোমিটার ভাড়া ৪০ টাকা, সেসঙ্গে পরের প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা হারে করা হয় এবং বিরতিকালীন চার্জ প্রতি মিনিট ২ টাকা করা হয়। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশাচালকরা এই ভাড়া মানেন না। চালকদের অভিযোগ, মালিকরা নির্ধারিত জমার চেয়ে বেশি আদায় করছেন। অন্যদিকে দুই বেলা দুই চালকের কাছে একই অটোরিকশা ভাড়া দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাতে যে ধরনের দুর্বৃত্তায়ন চলছে, তা বন্ধে বিআরটিএকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে যাত্রী হয়রানি তো কমবেই না বরং এই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। তবে কোম্পানিভিত্তিক সমন্বিত সিএনজি অটোরিকশা সেবা চালুই হতে পারে এই নৈরাজ্য বন্ধের অন্যতম উপায়।
মনে রাখতে হবে, স্বাভাবিক যাতায়াত ব্যবস্থা দেশের উন্নয়নের অংশ। যাতায়াত ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকলে সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। মানুষের যাতায়াতে সহায়ক সিএনজি অটোরিকশাগুলোও সেই উন্নয়নের অংশীদার। মালিক আইন না মেনে বেশি জমা আদায় করবেন, এ কারণে চালকরা যাত্রীদের ওপর অযাচিত দরকষাকষি করবেন, শেষে উচ্চ ভাড়ায় গন্তব্যে যাবেন, এটা হতে পারে না। এই অনৈতিক কর্মতৎপরতা দিনের পর দিন চলতে পারে না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে নজরদারি করা এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধে যথাযথ আইনি
ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
"