ইফতেখার হোসাইন

  ২১ মে, ২০১৯

শিক্ষা

বদলে যাওয়া নোবিপ্রবি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) এখন বদলে যাওয়া এক অনন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। মাত্র সাড়ে তিন বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি জ্ঞান, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাইলফলক ছুঁয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানের নোবিপ্রবি এখানকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ গোটা দেশে এক আস্থার নাম। শুধু তাই নয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান ও গবেষণার সুনাম দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বেও ছড়িয়েছে। নোবিপ্রবি এখন বিশ্বের অন্যান্য উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় একটি ‘ইমাজিং বিশ্ববিদ্যালয়’-এর পরিচিতি লাভ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের খ্যাতিমান শিক্ষক, অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান ২০১৫ সালের ২ জুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে

নিয়োগ পান। ওই বছরেরই ৭ জুন কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে ভগ্ন স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি অচলপ্রায় বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

পরিণত করতে অবিরাম কাজ করেন তিনি। নোবিপ্রবির একাডেমিক ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নসমূহ তারই হাত ধরে এগিয়ে চলে। উপাচার্য হিসেবে তার এ সময়কালে বাস্তবায়ন করা হয়েছে অনেক প্রকল্প, নির্মাণাধীন রয়েছে বহু প্রকল্প এবং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো অনেক।

নোবিপ্রবির বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহ : একাডেমিক গতি ত্বরান্বিত করার অংশ হিসেবে এখানে নতুন ৪টি অনুষদ ও ১৪টি বিভাগ খোলা হয়। যাতে করে এ অঞ্চলসহ গোটা দেশের আরো বেশিসংখ্যক গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী নোবিপ্রবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সেস এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি নামে দুটি নতুন ইনস্টিটিউট খোলা হয়েছে। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নোবিপ্রবিতেই প্রথম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নোবিপ্রবিতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মোবাইল অ্যাপস অ্যান্ড গেইম ডেভেলপমেন্ট ল্যাব এবং একটি নেটওয়ার্কিং ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ৫৫০ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল নির্মাণ ও ৬৫০ জন নারী শিক্ষার্থীর আবাসনের জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিল হল নির্মাণ এবং ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হল ও হজরত বিবি খাদিজা হলে সংস্কার আনা হয়েছে। ভাষাশহীদ আবদুস সালাম ও হজরত বিবি খাদিজা হলের অভ্যন্তরে ক্যান্টিন নির্মাণ করা হয়েছে। একাডেমিক ভবন-১ এবং দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের পঞ্চম-দশম তলা নির্মাণ এবং পুরো ভবন দুটিকে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। চার তলাবিশিষ্ট আধুনিক লাইব্রেরি ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে অতিথিদের জন্য তিন তলাবিশিষ্ট ভিআইপি গেস্ট হাউস নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ তলা অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস ভবন, প্রশাসনিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ (চতুর্থ ও পঞ্চম তলা নির্মাণ), গোলচত্বরের চারপাশ আরসিসি ঢালাইকৃত সড়ক এবং বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তাসমূহ নির্মাণ করা হয়েছে। বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের মধ্যে আরো রয়েছেÑ ১ হাজার কেবিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট স্থাপন। এ ছাড়া ৩০০ লাইনবিশিষ্ট বিটিসিএলের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও ৫০০ লাইন ক্ষমতাবিশিষ্ট পিএবিএক্স এক্সচেঞ্জ স্থাপন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নতুন সাতটি বাস, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিনটি সিভিলিয়ান বাস ও চারটি মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নোবিপ্রবি পরিবারের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অত্যাধুনিক সুবিধাসংবলিত অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনে চারপাশে বৃক্ষ রোপণ, দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং চারপাশ বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিতকরণ।

বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ : ১০ তলা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ তৃতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ১০ তলাবিশিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তা টাওয়ার, হাউস টিউটর, স্টাফ কোয়ার্টার ও প্রভোস্ট টাওয়ার নির্মাণাধীন। তিন তলা মেডিকেল সেন্টার ও তিন তলা ভিতে একতলা কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণাধীন। এ ছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ২ কোটি টাকা ব্যয়ে উপাসনালয় নির্মাণের কাজ চলছে। বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট ভবন সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বৃত্তি’ ও বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মচারীদের মাঝে ৩০ লাখ টাকার ‘বঙ্গবন্ধু সহায়তা ফান্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বছরব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনেরও ঘোষণা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ প্রকল্পসমূহ : বৈশ্বিক পরিবর্তনের কথা বিবেচনায় নিয়ে ২১০০ সাল নাগাদ বাস্তবায়নযোগ্য ‘ডেল্টা প্ল্যান’ এ দেশের সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাবার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অদূরে অবস্থিত উপকূলের ৭৭৮ একর জমির ওপর ‘দেশরতœ শেখ হাসিনা সমুদ্রবিজ্ঞান ও সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট’কে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অহিদুজ্জামান কাজ করে চলেছেন। যেখানে ডেল্টা ফরমেশন, সমুদ্রবিজ্ঞান, ইকো ট্যুরিজম, ম্যানগ্রোভসহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, স্পেস রিসার্চ, ম্যাটারিয়াল সায়েন্স, রোবটিকস, ন্যানো টেকনোলজি বিষয়ে বিশ্বমানের গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি হবে। এ ছাড়াও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নিকট ভবিষ্যতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হবে বিজনেস ইনকিউবেটর-সমৃদ্ধ পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক।

লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close