রেজাউল করিম খান

  ২১ মার্চ, ২০১৯

বিশ্লেষণ

উগ্র জাতীয়তাবাদের সন্ত্রাসী হামলা

নিউজিল্যান্ড হত্যাকান্ডের ঘটনার খবর একটি দৈনিক এভাবে শুরু করেছিলেন, ‘দিনের শুরুটা ছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। সপ্তাহান্তের ছুটির দিনের আগে ক্রাইস্টচার্চের বাসিন্দারা নিচ্ছিল ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি। কিন্তু দিনের শেষটা হলো রক্তের সোঁদা গন্ধে।’ ঠিক তাই। শান্তির সূচকে বিশ্বজুড়ে সুনাম নিউজিল্যান্ডের। ২০১৮ সালে শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে দেশটি। এমন একটি দেশেই শুক্রবার দুপুরে এক মসজিদে হলো নারকীয় সন্ত্রাসী হামলা। নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৫০, আহত ৪৮। হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন অনেকে। অকস্মাৎ এমন হামলার ঘটনায় নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীরা হতভম্ব হয়ে পড়েছে। আরো বেশি হতবুদ্ধি অবস্থা ক্রাইস্টচার্চের মানুষ। সবুজঘেরা একটি শহর, গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে চোখে পড়ে ঘরবাড়ি। এমন একটি শান্ত এবং নিরূপদ্রব শহরে শুক্রবার স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলি ছুটেছে। নিউজিল্যান্ডে এ ধরনের হত্যাকান্ডের উদাহরণ খুঁজতে গেলে ইতিহাসের অনেকপাতা ওল্টাতে হয়, যেতে হয় অনেক পেছনে। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অপরাধমূলক কর্মকান্ডের দরুন এ ধরনের ব্যাপক প্রাণহানি প্রত্যক্ষ করেছিল দেশটি। এরপর থেকে আর ঘটেনি কখনো। এবার নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হলো দেশটিতে, হয়তো তৈরি হলো অনেক আশঙ্কাও।

ব্রেন্টনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আল নুর মসজিদে গুলি চালানোর পর ব্রেন্টন লিনউড মসজিদে যান। সেখানে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আবদুল আজিজ নামের এক আফগান অভিবাসী। রাস্তায় পড়ে থাকা একটি বন্দুক তুলে গুলি চালানোর চেষ্টা করেন আজিজ। কিন্তু ওই বন্দুকে গুলি ছিল না। আবদুলের হাতে বন্দুক দেখে নিজের বন্দুক ফেলে পালানোর চেষ্টা করেন ব্রেন্টন। পরে তিনি গাড়িতে ঢুকে চলে যান। বিবিসি বলছে, দুজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা এরপর ব্রেন্টনের পিছু নিয়ে গাড়ি আটকে দেন। এই দুই পুলিশ সদস্যের হাতেই গ্রেফতার হন ব্রেন্টন। সন্ত্রাসী ব্রেন্টন বৈধ অস্ত্র বহন করছিলেন। তাই হামলায় ব্যবহৃত গুলি কিনতে তাকে সমস্যায় পড়তে হয়নি। মসজিদে হামলা চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যার পরও বিকার নেই হামলাকারী ব্রেন্টন টেরান্টের। ছবি তোলার সময় ব্রেন্টন হাতকড়া পরা অবস্থায় ডান হাতের আঙুল দিয়ে বিশেষ ইঙ্গিত করেন। ব্রিটিশ সংবাদপত্র মেট্রো এই ইঙ্গিতের ব্যাখ্যা করে বলেছে, এর মাধ্যমে ব্রেন্টন শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বুঝিয়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিহত লোকজনের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে ক্রাইস্টচার্চের লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের শিক্ষক কৃষিবিদ ডক্টর আব্দুস সামাদ এবং তার স্ত্রী রয়েছেন। আব্দুস সামাদ ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন দীর্ঘদিন। হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার পর তারা দেশে ফিরেছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে জুমার নামাজ আদায়রত মুসলমানদের ওপর প্রথম হামলা চালায় এক সন্ত্রাসী। পরে কাছাকাছি শহর তলিলিনউডের মসজিদেও সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শী কারওকার মতে, একাধিক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী রমজান ছিলেন আল নুর মসজিদে। তিনি বলেছেন, ‘পুরো মসজিদে ছিল পিনপতন নিস্তব্ধতা। হঠাৎ করেই শুরু হলো গুলির শব্দ। চোখের সামনে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল জ্যান্ত মানুষগুলো।’ বন্দুকধারীর নাম ব্রেন্টন টেরেন্ট। সে উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদী খ্রিস্টান জঙ্গি। এ হামলার আগেই সে টুইটারে ৭৩ পাতার ইশতেহার আপলোড করে হামলার ঘোষণা দেয়। ইশতেহারে সে বলে, এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা। এ ছাড়া অভিবাসনের বিরুব্ধে অবস্থান নেওয়ায় সে নিজেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বলে উল্লেখ করে। নিজেও একজন অভিবাসনবিরোধী বলে উল্লেখ করেছে সে। অভিবাসীবিদ্বেষী এ হামলাকারী বলেছে, হামলা করে সে অনুপ্রবেশকারীদের (অভিবাসীদের) দেখাতে চায় যে, আমাদের ভূমি কখনো তাদের ভূমি হবে না, যতক্ষণ শেতাঙ্গরা জীবিত থাকবে। ইশতেহারে সে আরো বলে, আমি মুসলিমদের অপছন্দ করি। সে বলে, আমি ডিলানরুফসহ আরো অনেকের বই পড়েছি। তবে আমি প্রকৃতভাবে অ্যান্ডার্স ব্রেইভিকের ওই হামলা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছি। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২২ জুলাই নরওয়ের উটয়া যুবশিবিরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ও রাজধানী অসলোতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আন্দ্রেস বেরিং ব্রেইভিক ৭৭ জনকে হত্যা করে। পুলিশের পোশাক পরে সে ঠান্ডা মাথায় একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটায়। সে অভিযোগ করে, নরওয়ের লেবার দলের সরকার তাদের বহুজাতি তত্ত্ব দিয়ে নরওয়ের নিজস্ব সংস্কৃতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। নরওয়ের এক আদালত গণহত্যাকারী অ্যান্ডার্স বেরিং ব্রেইভিককে পরের বছর হত্যাযজ্ঞের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে ২১ বছরের জেল দেয়। বিচারের সময় ব্রেইভিক নিজেকে দোষী বলতে অস্বীকার ও এ হত্যাযজ্ঞকে ‘যুক্তিসংগত’ বলে বর্ণনা করে জানায়, নরওয়ের ‘ইসলামীকরণ’ বন্ধ করার জন্য ওই হত্যাযজ্ঞের প্রয়োজন ছিল। ব্রেইবিক বলেছে, সে সাংস্কৃতিক মার্ক্সবাদীদের ঘৃণা করে এবং বিশ্বে ইসলাম ধর্মের ছড়িয়ে পড়া থামাতে ‘ক্রুসেড’ করতে আগ্রহী।

হত্যাকারী ব্রেন্টনের মডেল মানুষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী উগ্র জাতীয়তাবাদই গণহত্যার মতো বর্বর কর্মে অনুপ্রাণিত করেছে তাকে। মসজিদে হামলা যে একজন ইসলাম বিদ্বেষী শ্বেত জাতীয়তাবাদীর হাতে সংঘটিত একটি সন্ত্রাসী ঘটনা, তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এতে তিনি পড়েছেন সমালোচনার মুখে। ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয় পরিষদ এক নিবন্ধে বলেছে, এ ঘটনা একটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’, যার পেছনে রয়েছে প্রবল ইসলাম বিদ্বেষ। অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে কথা বলেছেন, তাতে একটি ভুল বার্তা পাঠানো হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চের সন্ত্রাসী হামলাকারী তার ৮৭ পাতার ইশতেহারে অভিবাসীদের আগমনকে হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ঠিক একইভাবে ট্রাম্প মেক্সিকো থেকে আগত বহিরাগতদের আগমনকে ‘হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। দ্য নেশন পত্রিকায় জন নিকলস বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন একটি জঘন্য ঘটনার পরও তার স্পষ্ট নিন্দা করতে ব্যর্থ হলেন। বিশ্বের মুসলিমদের জন্য কৃষ্ণতম এমন একটি দিনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম, ইসলাম, ইসলামবিদ্বেষ, শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদ, বর্ণবাদ, ঘৃণা বা ধর্মের কারণে ঘৃণাপূর্ণ সহিংসতাÑ এ কথাগুলো বলতে ব্যর্থ হলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল রিপাবলিকান পার্টি। দলটি সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল, অধিকাংশ নীতিতেই গোঁড়া ও কট্টরপন্থি। রিপাবলিকানদের মূল ভোটার বেজ হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা। আরো ভালোভাবে বললে রক্ষণশীল ও বয়স্ক শ্বেতাঙ্গরা। বর্তমান রিপাবলিকান পার্টির রাজনৈতিক ভাবতত্ত্ব এতটাই গোঁড়া ও উগ্র যে, নোমচমস্কি তাদেরকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর প্রতিষ্ঠান ও মানবসভ্যতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

নিউজিল্যান্ড হামলার ঘটনায় কোনো খ্রিস্ট সন্ত্রাসী গ্রুপ জড়িত কি না, তা জানা যায়নি। খ্রিস্টান সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত খ্রিস্টধর্মীয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য কিংবা ধর্মীয় অনুপ্রেরণাজাত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে ৫ নভেম্বর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবন গানপাউডার বিস্ফোরণের সাহায্যে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র যেকোনো ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসে অন্যতম আদি উদাহরণ। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, এশিয়া, চীন, ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, ইউরোপের ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন, রোমানিয়া প্রভৃতি দেশে খ্রিস্টান সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা চালু রয়েছে। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সন্ত্রাসী মতাদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ক্লানরা ইহুদি, ক্যাথলিক ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। ২০০১ সালের ১৬ জুলাই পিটার জেমস নাইট একটি ব্যক্তিগত গর্ভপাত প্রদানকারী ইস্ট মেলবোর্ন ফার্টিলিটি ক্লিনিকে আক্রমণ চালান। তিনি ক্লিনিকের সবাইকে হত্যা করে মেলবোর্নের অন্য গর্ভপাত ক্লিনিকগুলোতে হামলা চালাতে চেয়েছিলেন। ‘পূর্বেরআলো’ একটি নতুন চীনা খ্রিস্টান আন্দোলন। এই গোষ্ঠী একটি সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ডানপন্থি ক্যাথলিক সন্ত্রাসবাদী দল প্যারিসের একটি সিনেমা হলে আক্রমণ চালিয়েছিল ‘দ্য লাস্ট টেম্পটেশন অব ক্রাইস্ট’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনে বাধা দিত। মানসাসি জাতীয় খ্রিস্টান সেনাবাহিনী (এমএনসিএ), উত্তর-পূর্ব ভারতের অপারেটিং একটি খ্রিস্টান চরমপন্থি দল। ২০০৯ সালে হিন্দুদের এক গ্রামে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে খ্রিস্ট ধর্মান্তরের চেষ্টা করে। জঙ্গিরা এক হাতে বন্দুক এবং অন্য হাতে বাইবেল বহন করেছিল। ত্রিপুরা জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (এনএলএফটি) একটি বিদ্রোহী দল উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। এটি ভারতের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন। এনএলএফটির লক্ষ রয়েছে ত্রিপুরাতে সকল উপজাতিদের জোরপূর্বক খ্রিস্টধর্মে রূপান্তর। নাগাল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী সমাজতান্ত্রিক কাউন্সিল (এনএসসিএন) উত্তর ভারতে পরিচালিত একটি খ্রিস্টান নাগা জাতীয়তাবাদী জঙ্গি গ্রুপ। সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য একটি সার্বভৌম খ্রিস্টান রাষ্ট্র নাগালিম স্থাপন করা। ইন্দোনেশিয়ার পোসো শহরের আশপাশের কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে খ্রিস্টান জঙ্গিরা ২০০০ সালে ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছিল যা ওয়ালিসংগো স্কুলগণহত্যা নামে পরিচিত। হামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিহতের সংখ্যা ১৬৫। রেড গ্রুপ (লাল দল) নামের এই স্থানীয় খ্রিস্টান মিলিশিয়া গোষ্ঠীর তিনজন নেতাকে ২০০৬ সালে গণহত্যার সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য দোষীসাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। ইলাগা একটি ক্যাথলিক চরমপন্থি দল, যারা দক্ষিণ ফিলিপাইন ভিত্তিক ইসলামবিরোধী। খ্রিস্টান পরিচয় (আইডেন্টিটি) হল গির্জা এবং ব্যক্তিদের একটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংযুক্ত বৈশ্বিক গোষ্ঠী; যা জাতিগত ধর্মতত্ত্বে বিশ্বাসী। তারা দাবি করে, উত্তর ইউরোপীয় সাদারা ইসরায়েলের হারিয়ে যাওয়া উপজাতির প্রত্যক্ষ বংশধর এবং ঈশ্বরের নির্বাচিত মানুষ।

তবে খ্রিস্টান জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইসলামী জঙ্গি সংগঠন। বিশ্বের ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠনগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়ার বোকোহারাম। ২০১৫ সালে আবুবকর শেকাউ-এর নেতৃত্বে এ জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৬ হাজার ৬৪৪ জন মানুষকে হত্যা করেছে। তদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া হাজারো কিশোরীকে অপহরণ করেছে বোকোহারাম। যদিও বোকোহারাম বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টির দিক থেকে সবচেয়ে ওপরে আছে আইএস। বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলা হচ্ছে আইএসকে। ২০১৫ সালে তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৭৩ জন মানুষ এবং আহত হয় ৫ হাজার ৭৯৯ জন। ১ হাজার ৭১টি হামলা চালিয়েছে তারা বিশ্বজুড়ে। বোকোহারামকে যদি আইএস-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে আলশাবাবকে তুলনা করা যায় আল কায়েদার সঙ্গে। পূর্ব আফ্রিকায় এদের আধিপত্য অনেক বেশি। সোমালিয়াকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোই তাদের মূল লক্ষ্য। লস্কর-ই-তোইবা পাকিস্তানের কট্টরপন্থি ইসলামিক সংগঠন। এই জঙ্গি সংগঠন আজও ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের দাপট ও আতঙ্ক টিকিয়ে রেখেছে। তাদের লক্ষ্য অবিলম্বে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করা ও সমগ্র উপত্যকাকে পাকিস্তানের আওতায় এনে রক্ষণশীল মুসলিম শরিয়তি আইন চালু করা। বিশ্বের কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় জ্বলজ্বল করে আল-কায়েদার নাম। ইসলামের প্রতি পশ্চিমী দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিই পালটে দিয়েছে এই কট্টরপন্থি মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। তাদের লক্ষ্যÑ খ্রিস্টান ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া ‘জিহাদ’। পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ ইসলামিক ফ্রন্টগঠন। তালিবান : রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রথম গঠিত এই জঙ্গি সংগঠনটি আফগানিস্তানে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শাসন চালায়। অনেকে আশঙ্কা করছেন, নিউজিল্যান্ড হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে কোনো ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী আবার নতুন করে ভয়ংকর কোনো ঘটনার জন্ম না দেয়।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close