কোচিং বাণিজ্যের শেষ কোথায়
দেশে আইন আছে। প্রশ্ন উঠেছে, সর্বক্ষেত্রে কি এ আইন মানা হচ্ছে? দেশের বেশির ভাগ মানুষই মনে করেন, মানা হচ্ছে না সে আইন। সর্বত্রই আইন ভাঙার যেন একটা প্রতিযোগিতা চলছে। আর এই প্রতিযোগিতা যেন সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করে গ্রাস করতে চলেছে দেশ, জাতি ও পুরো সমাজকে। এর থেকে কি বেরিয়ে আসার কোনো পথ খোলা নেই! সম্ভাব্য উত্তর : সম্ভবত নেই। কেন না, এ পর্যন্ত তেমন কোনো উপমা বা দৃষ্টান্ত আমরা দেখাতে পারিনি। চেষ্টাও কম করা হয়নি বা হচ্ছে না। তবু এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসাটা হয়ে ওঠেনি।
কিন্তু কেন!
বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। কিন্তু গবেষণার ফলাফল হাতে পেতে ‘ডাক্তার আসার পূর্বেই রোগীটি মারা গেল’Ñ এমনটি হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কোন সেক্টরের কথা বলব। এমন কোনো সেক্টর খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে আইনের বরখেলাপ করা হচ্ছে না। সম্প্রতি কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধ হওয়ার পরও তা বন্ধ হয়নি। চলছে, পর্দার অন্তরালে। চক্ষুলজ্জা বলে একটা কথা আছে। আইন না মানার লজ্জা! তাই; এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও বহাল তবিয়তে চলছে কোচিং বাণিজ্য। রাজধানীর নামকরা স্কুলের শিক্ষকরা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দরজায় কোচিং সেন্টার বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে রেখেই এ কাজ করছেন তারা। কোথাও কোথাও সরকারের পক্ষ থেকে আসা বিজ্ঞপ্তির ব্যানার ঝোলানো হয়েছে। ভেতরে চালানো হচ্ছে সূক্ষ্ম কারুকাজের আওতায় নিষিদ্ধ কোচিং। এ যেন সরকারের নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন।
স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি লোকজন কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন? না তাদের ঘুম পাড়ানোর ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা নির্দেশ জারি করলেন, কেবল জারি করাটুকুই তাদের দায়িত্ব ছিল বলে তারা মনে করছেন! ফলোআপের কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কি নেই, এ প্রশ্নের ধারেকাছেও তাদের অস্তিত্বকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খোদ ঢাকা শহরের কেন্দ্রবিন্দুতেই আইন অথবা সরকারি নির্দেশনাকে পদদলিত করার এক মহাপ্রতিযেগিতা যেন নগর ও দেশবাসীকে আতঙ্কিত করে না তুললেও চিন্তিত করেছে বৈকি। সড়ক-মহাসড়কে আমরা আইন অমান্যের ঘটনা প্রতিনিয়তই দেখছি। দেখতে দেখতে অনেকটা গা-সওয়া অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোনো প্রতিকার না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত মানুষের এ উচ্চারণ।
আমরা মনে করি, আইন লঙ্ঘনকারীদের দমন করা কিংবা আইন মান্যকারীদের পথে ফিরিয়ে আনাটা খুব একটি কঠিন কাজ নয়। তবে, তাদের প্রত্যেকের পেছনে রক্ষক হিসেবে যারা রয়েছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কাজটি সহজ নয়। তাদের হাত অনেক দীর্ঘ। ক্ষমতাও অনেক। সমাজে তারা রক্ষকের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত থাকলেও, তারা রক্ষকের ভূমিকায় না থেকে ভক্ষকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে নিজেদের রূপান্তর ঘটিয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোকÑ ‘এটাই প্রত্যাশা’।
"