জি. কে. সাদিক

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আন্তর্জাতিক

ইরান : বিপ্লবের ৪০ বছর

সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রচিন্তকদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ মুসাভি খোমেনির নেতৃত্বে রেজা শাহ পাহলভির দীর্ঘ ৩৮ বছরের রাজতান্ত্রিক শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে ইরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ইরানে ইসলামী বিপ্লব গত শতকের তৃতীয় বিস্ময়কর বিপ্লব। বিশেষ করে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বব্যাপী স্যাকুলার মতাদর্শের জয়জয়কার। বিশ্বযুদ্ধ চলমান অবস্থায় রাশিয়ায় ১৯১৭ সালে লেনিনের নেতৃত্বে সফল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে এবং এর প্রভাবে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে ক্রমাগত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে থাকে। অন্যদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পতনের ফলে ১৯২৪ সালে তুরস্কের অটোম্যান সম্রাজ্যের পতন এবং কামাল পাশা আতাতুর্কের নেতৃত্বে ইসলামী মূল্যবোধ ভেঙে পাশ্চাত্য স্যাকুলার মতবাদের প্রতিষ্ঠা। চীনে ১৯৪৯ সালে মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। পঞ্চশের দশকে মিসরের জামাল আবদেল নাসেরের আরব জাতীয়তাবাদের ব্যর্থ প্রয়াস। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রো ও চে গেভারার নেতৃত্বে কিউবায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাকার ঘটনার পর সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রচিন্তকদের মনে এ ধারণা এঁটে বসে যে, আধুনিক বিশ্বে ধর্মভিত্তিক একটা রাজনৈতিক জাগরণ বা ধর্মভিত্তিক কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আর সম্ভব নয়। কারণ তখন ধর্মতাত্ত্বিক রাষ্ট্র খোদ আরব দেশগুলোতেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রভাব শুরু হয়েছিল। ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়া এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যদিকে আরব রাষ্ট্রগুলো নিজেদের ধর্ম ও জাতীয়তার ক্ষেত্রে একেবারে নড়বড়ে অবস্থানে। ফিলিস্তিনের বুকে ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আরব রাষ্ট্রগুলোর ব্যর্থতা এর প্রমাণ। ঠিক সে মুহূর্তে ইরানের মতো একটা শিয়া প্রধান দেশে ইসলামী মূল্যবোধের জাগরণ সত্যিই মহাবিস্ময় বৈকি?

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের ৪০ বছর পূর্তি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন গত শতকের দুনিয়া কাঁপানো রুশ বিপ্লবের ফল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন ২৮ বছর আগে ভেঙে গেছে। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক চীনে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় থাকলেও ধ্রুপদী মার্কসবাদ আর নেই। কিউবায় কাস্ত্রোর যুগের অবসান হয়েছে। অপরদিকে ৪০ বছর পরও ইরানিরা বিপ্লবকেন্দ্রিক উদ্দীপনায় উজ্জীবিত। বিপ্লবোত্তর ইরানকে দুই ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা এখনো পুরোদমে চলমান। এক. ধর্মীয় মতাদর্শকেন্দ্রিক বিরোধ। যেমনÑ ইসলামের উৎস-ভূমি সুন্নি রাষ্ট্র সৌদি আরবসহ প্রতিবেশী সুন্নি রাষ্ট্রগুলোর ধর্মীয় মতাদর্শগত বিরোধিতা। কারণ ইরান একটি শিয়া প্রধান দেশ; যার ফলে ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে শিয়া বিপ্লব হিসেবে চিহ্নি করে মুসলিম দেশগুলোতে বিশেষত সুন্নি আরব দেশগুলোতে ইরানের শিয়া মতবাদের প্রভাবের ভীতি থেকে ‘ইরান ঠেকাও’ তৎপরতা ব্যাপকভাবে শুরু হয়। অন্যদিকে ইরান বিপ্লবের মর্মবাণী হচ্ছে; স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র। যার ফলে বংশপরম্পরায় শাসিত রাজতান্ত্রিক আরব সুন্নি দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক রাজনীতির জোয়ার সৃষ্টি হতে পারেÑ এ ভয়ে ইরানের বিরুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলো কঠোর অবস্থান নেয়। শুরু থেকেই ইরান ছিল ইসরায়েলের বিরোধী ও ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আন্দোলনের একনিষ্ঠ সমর্থক। যার ফলে একদিকে আরব সুন্নি রাষ্ট্রের বিরোধিতা ও মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রবল বিরোধিতাকে মোকাবিলা করেই আগাতে হয়েছে, হচ্ছে এবং ক্রমশ ইরানের প্রভাব ঠেকানোর জন্য ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়; যা দুই পক্ষকে অস্তিত্বের লড়াইয়ে নামতে বাধ্য করে; ফলত বাড়তে থাকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধোন্মাদনা। দুই. পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক প্রতিরোধ ও শক্তিশালী পশ্চিমা মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচারণা। যার ফলে ইরানের অর্থনৈতিক জাগরণ ও অগ্রগতি অনেকটা বাধার মুখে পড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী ইরানের ইসলামী শাসনব্যবস্থা নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে ইরানকে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে এবং এর প্রভাব ইরানের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সার্বিক উন্নয়নের ওপর পড়েছে।

বিপ্লবের আগে ইরানের প্রধান প্রতিবন্ধক ও শত্রু রাষ্ট্র ছিল যুক্তরাজ্য, তবে এখন সে স্থান দখল করে নিয়েছে আমেরিকা। গত ৪০ বছরে ইরানের ওপর দেশটি তিনবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের ওপর ইতিহাসের কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মূল উদ্দেশ্য ইরানকে নতজানু করা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেÑ সেটা কতটা সম্ভবপর হবে? বিপ্লবের পর থেকেই ইরান প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্র ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এক ধরনের শত্রুতার মুখোমুখি হয়েও এগিয়ে চলছে। তেল বিক্রি, সমুদ্র-বাণিজ্য, ব্যাংক, ইরানি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান সবই ছিল এ নিষেধাজ্ঞার কবলে। তথাপি ইরানের অগ্রযাত্রা কিছুটা শথø করা গেলেও বন্ধ করা যায়নি। প্রতিযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যের বৈরি রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় ইরান উত্তরোত্তর বেশিই সমৃদ্ধি লাভ করেছে। সামরিক শক্তির দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইসরায়েল বাদে ইরানই সর্বসেরা। শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইরান বিশ্বের উন্নত শক্তির দেশগুলোর চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আফগান থেকে শুরু করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানে প্রভাব ক্রমবর্ধমানÑ সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, ইয়েমেনে ইরানের প্রভাব বেশ পোক্তভাবেই বাড়ছে। অন্যদিকে ইরান অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে শক্তিমত্তা সহকারেই এগিয়ে চলছে। দেশটি নারী শিক্ষা, মানব উন্নয়ন সূচকেও বিশ্লেষক ও চিন্তকদের ধারণা অসার প্রমাণ করেছে। ভূ-রাজনীতিতে ও আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে ইরান অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সফল। এসব সত্যিই বিস্ময়কর। গত ৪০ বছরের অনেক বাধার মুখেও বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৯টি রাষ্ট্রের মধ্যে ইরান ৬০তম; যা চীন, তুরস্ক ও ভারতের ওপরে। বিপ্লবের পর ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইরানিদের গড় আয় বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। আর গড় আয়ু বেড়েছে ৫৪ থেকে ৭৫ বছর। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরিসংখ্যানে দেশটির রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এ রফতানি প্রবৃদ্ধিতে একটা ভাটা পড়বে। কারণ আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার বড় লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের তেল বিক্রি কমানো। দেশটির রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে তেল বিক্রির মাধ্যমে। হিসাব মতে, গত বছর দৈনিক তেল বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ব্যারেল। নিষেধাজ্ঞার ফলে অন্তত ১০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি কমেছে; যার ফলে রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জন কিছুটা ব্যাহত হবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও ইরান ২০১৭ সালে বিশ্বের শীর্ষে ছিল। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে রাশিয়া ও চীন। অন্যদিকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ শীর্ষ ২৫ দেশের মধ্যে ইরানের প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে ১৪ শতাংশ। প্রযুক্তিপণ্য রফতানিতেও ইরানের সাফল্য রীতিমতো বিস্ময়কর। দৈনিক তেহরান টাইমসের তথ্যমতে, বিশ্বে ন্যানো প্রযুক্তিতে ইরান, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোকে টপকে শীর্ষে অবস্থান করছে এবং এ খাতে ৮ হাজার ৭৯১টি আর্টিকেল প্রকাশ করেছে। দেশটি ২০১৫ সালে ৫০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তিপণ্য রফতানি করেছে। এ তালিকায় যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। বৈজ্ঞানিক উৎপাদনের ক্ষেত্রেও দেশটির অগ্রগতি বিস্ময় জাগায়। এ ক্ষেত্রে ইরান আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে ১৬তম।

বিপ্লবোত্তর ইরানের ইসলামী শাসন পদ্ধতি নিয়ে একটা কথা খুব প্রচার পেয়েছিল এবং এখনো এ কথার প্রচার আছে যে, ইরানে নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতা থাকবে না এবং সাংস্কৃতিক চর্চা ও মুক্তচিন্তা বাধাগ্রস্ত হবে। কিন্তু বর্তমানে ইরানের নারী শিক্ষার অগ্রগতি ও নারীদের সার্বিক উন্নতি যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের চাইতে ভালো আছে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুশাসন যে নারীকে বন্দি করে না, ইরান এ পরীক্ষায় পাস মার্ক পেয়েছে। তাছাড়া সংস্কৃতির চর্চার ক্ষেত্রেও ইরানের সফলতা রয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও পার্সি সংস্কৃতির চর্চায় ইরানিদের শিল্পকর্মও বিশ্বমানের। এ ক্ষেত্রে ইরানি চলচ্চিত্রের দৃষ্টান্ত নেওয়া যায়। দুবার সেরা পরিচালক হিসেবে অস্কার জিতে নেওয়ার রেকর্ডও রয়েছে।

এখন কথা হচ্ছে, আধুনিক বিশ্বে ইরানের মতো একটি ধর্মীয় অনুশাসনে পরিচালিত শত বাধা ও বৈরিতার সম্মুখীন একটা রাষ্ট্রের এ গতির মূলে কোন বিষয়টি রয়েছে? এ ক্ষেত্রে ইরানের ইসলামী বিপ্লব সম্পর্কে ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর মূল্যায়ন অনেকটা বাস্তব ও উঁচু দরের। বিপ্লব চলমান সময়ে মিশেল ফুকো দুবার তেহরান গেছেন। এ নিয়ে তার ১৫টি প্রবন্ধ ও অনেক সাক্ষাৎকার রয়েছে। ফুকো ইরানের বিপ্লবকে শুধুই মোল্লাদের একটা ধর্মতাত্ত্বিক বিপ্লব হিসেবেই দেখেননি। তিনি বিচার এবং বিপ্লবকে, ‘বহমান ইতিহাসের এক বর্তমান প্রকাশ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি এটাকে ‘ইসলামী মৌলবাদ’ না বলে ‘ভয়ের উপস্থিতিহীন’ এবং ‘সম্মিলিত ইচ্ছার স্ফুরণ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন; যার মোকাবিলা করা কঠিন। এখানে বলা দরকার যে, ফুকোর চিন্তা অনেকটা প্রভাবিত হয়েছে ইরান বিপ্লবের সমাজতান্ত্রিক ব্যাখ্যাকার আলী শরিয়তির চিন্তা দ্বারা।

আরব সুন্নি দেশগুলো বৈরিতা এবং আন্তর্জাতিক শক্তির নিষেধাজ্ঞা ও মার্কিন বিরোধিতার মুখেও ইরানিদের মনোবল নষ্ট করা সম্ভব হয়নি। বরং এটা তাদের আরো শক্ত করেছে। অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠী কিছুটা কর্তৃত্ববাদী হলেও ইরানিরা সেটা মেনেই নিয়েছে। বড় কোনো বিদ্রোহ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। আর ইরানিদের সব দুর্ভোগের ভাগিদার তাদের প্রেরণা উৎস আধ্যাত্মিক নেতা খোমেনি ও তাদের শাসকরা। বড় কোনো কেলেঙ্কারি বা দুর্নীতির ফাঁদে পা দেননি। এটা ইরানিদের মনোবল আরো বাড়িয়েছে। বিশ্লেষণালোকে এটা অনেকটা প্রতীয়মান যে, অপ্রতিরোধ্য ইরানকে সহজে ভাঙা বেশ কষ্টসাধ্য হবে। তবে ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ইরানিদের জন্য কোনো আনন্দ সংবাদ উপহার দেবে না। কারণ ইতিহাসের কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যে তাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close