পঞ্চানন মল্লিক

  ২২ জানুয়ারি, ২০১৯

মতামত

ওষুধ কেনায় সচেতনতা জরুরি

মানুষের জীবনে রোগবালাই আছে। আর এসব রোগবালাই হলে মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য তৈরি হয়েছে হাসপাতাল বা চিকিৎসালয়। অসুখ-বিসুখে মানুষ চিকিৎসা নিতে এসব হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য যখন-তখন ওষুধের দরকার হয়। ওষুধের দোকান নিকটবর্তী হলে সহজে ও স্বল্প সময়ে রোগীদের জন্য ওষুধ ক্রয়ের সুবিধা হয়। তাই রোগীর সঙ্গে আসা লোকজন সাধারণত নিকটবর্তী দোকানগুলোতেই বেশি যায়। বিক্রি ভালো তাই হাসপাতালের সামনে বা আশপাশে গড়ে ওঠে অনেক ওষুধের দোকান। এসব দোকান রাত-বেরাতে বা অসময়ে অনেক সময় রোগীর উপকারে আসে। কিছু দোকানের কর্মচারী রাতে দোকানের ভেতরেই ঘুমায়। প্রয়োজনে ডেকে তুলে রাতে ওষুধ নেওয়া যায়। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে জরুরিভাবে ওষুধ পাওয়া না গেলে রোগীর ক্ষতি হতে পারে। দুর্ভোগও বেড়ে যেতে পারে। তাই হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানগুলো জরুরি প্রয়োজনে রোগীর ওষুধ সরবরাহে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রয়োজনে দ্রুত সেখান থেকে ওষুধ ক্রয় করা যায়। কিন্তু এসব দোকান মালিকের কারো কারো অনৈতিক কর্মকান্ডের কথা মাঝে মাঝে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে শোনা যায়; যা হয়ে দাঁড়ায় রোগীদের জন্য একটি বিড়ম্বনার কারণ। কোনো কোনো হাসপাতাল, ডাক্তারখানা, ক্লিনিক বা দাতব্য চিকিৎসালয়ের সামনে বা আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠে অসংখ্য ওষুধের দোকান। এদের ভেতর কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও থাকেন। নি¤œমানের ওষুধ, ভেজাল ওষুধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দূরাগত অসুস্থ ব্যক্তি বা তার স্বজনদের প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে অধিক মুনাফা উপার্জন এদের উদ্দেশ্য। কোনো কোনো দোকানে এজেন্ট বা দালালও নিযুক্ত থাকে। এরা হাসপাতালে কোনো নতুন রোগী এলে তাদের স্বজনদের সঙ্গে সেঁধে ভাব জমায়। টুকটাক সহযোগিতা করে। চমকদার কথাবার্তা বলে রোগীর স্বজনদের মন জয় করে। তারপর ভুলিয়ে ভালিয়ে দোকানে এনে ধরিয়ে দেয় এসব নি¤œমানের ওষুধ। কম দামের ওষুধ ভালো ওষুধ বলে চালিয়ে দেয়। কোনো কোনো সময় ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণ থাকে। আবার কোনো কোনো সময় প্যাকেটে ওষুধ ঠিক মতো থাকে না। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর লোকজন প্রথমে বুঝে উঠতে পারেন না। আসল ওষুধ মনে করে অধিক মূল্যে ভেজাল ওষুধ কিনে প্রতারিত হন।

এমন অনেক অভিযোগ ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে শোনা যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভুল ওষুধের কারণে মৃত্যুর খবরও পত্রিকায় অনেক সময় চোখে পড়ে। জটিল রোগে মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়। তখন রোগীসহ তার স্বজনরা অনেকটা দিশাহারা হয়ে পড়েন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হাসপাতালে অবস্থান ও অপেক্ষা করতে থাকেন। ডাক্তার ওষুধ লেখার সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি যেখানে ওষুধ মেলে, সেখান থেকেই তাড়াতাড়ি ওষুধ সংগ্রহের চেষ্টা করেন। দামের বিষয়টি তখন অত দেখার সময় থাকে না। আর এই সুযোগটাই গ্রহণ করে হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা ওষুধের দোকানের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বিষয়টি রীতিমতো বেদনাদায়ক ও মর্মস্পর্শী। একটি মানুষ ব্যধিক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আর কেউ কেউ তাদের নিয়ে অসৎ ব্যবসায় মাতে এটি একটি জঘন্যতম প্রবৃত্তি ছাড়া আর কী হতে পারে? তবু এমন ঘটনা কোথাও কোথাও ঘটছে অহরহ। এদের পাল্লায় পড়ছেন ভুক্তভোগীরা। পরিস্থিতিতে পড়ে অনেকে শিকারে পরিণত হচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীর আত্মীয়স্বজন এবং লেখতে-পড়তে কম জানা লোকরা। তবে এসব নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ তেমন নেই। রোগী সুস্থ হলে অনেকেই এসব ভুলে যান। অনেকে অদৃষ্টের পরিহাস মনে করে প্রমাদ গুনেন। অনেকে এদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় গেলে পরে সমস্যা হবে, পরে কখনো এলে ওষুধ দিতে চাইবে নাÑ এসব মনে করে ছাড় দিয়ে চলে যান।

অন্যান্য ব্যবসার মতো ওষুধ ব্যবসাও একটি হালাল পেশা। বিশেষ করে ওষুধ মানুষের জীবন রক্ষাকারী একটি উপাদান। সময়মতো অসুস্থ ব্যক্তিদের মুখে ওষুধ তুলে দিতে পারলে অনেক বড় বড় রোগের হাত থেকে জীবন রক্ষা পায়। তাই ওষুধের দোকানের ব্যবসা একটি মহৎ ব্যবসা তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কিছু অসাধু, ফন্দিবাজ ব্যবসায়ী এটি কলুষিত করছে। মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে অধিক আয়ের ধান্ধায় দেশ ও দেশের মানুষের চরম ক্ষতি করছে। বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে বেশ সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের ওষুধের মান বিশ্বের অনেক দেশের থেকেও উন্নত। কিন্তু ওষুধের বিপণন প্রক্রিয়া আরো নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার। এটি আরো মনিটরিংয়ের আওতায় আনা প্রয়োজন। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যেন অসুস্থ রোগীরা সহজে, নিরাপদে ও বিনা ভোগান্তিতে ক্রয় করতে পারেন, সেটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। পয়সা দিয়ে ওষুধ কিনে যদি প্রতারিত হতে হয়, জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে ওষুধ যদি জীবনঘাতি হয়; তাহলে দুঃখের আর শেষ থাকবে না। তাই কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে আরো সচেতন হতে হবে। হাসপাতালের সামনের সব ওষুধ ব্যবসায়ীই যে অসৎ, এমনটি নয়। বরং এদের মধ্যে কেউ কেউ অসৎ পন্থা অবলম্বন করছে। এদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তেমনি সৎ ও নিষ্ঠাবান ওষুধ ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে হবে। এ ব্যাপারে ক্রেতাপক্ষকেও সচেতন হতে হবে। হঠাৎ করে অপরিচিত কোনো ওষুধ বিক্রেতা বা দোকানের কোনো কর্মচারীর কথা অন্ধের মতো বিশ্বাস না করে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনের সঙ্গে মিলিয়ে, ওষুধের নাম, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, কোম্পানির নাম ভালোভাবে দেখে ওষুধ ক্রয় করতে হবে। ওষুধের প্যাকেটটি ঠিকমতো লাগানো বা সিল করা আছে কি না, তাও ভালো করে দেখে নিতে হবে।

লেখক : কবি ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close