অ্যাড. শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ

  ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

মতামত

প্রয়োজন সরকারের ধারাবাহিকতা

দেশে চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। এ কর্মযজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন-খালাস সহজীকরণ করতে নেওয়া আরো কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও এগিয়েছে দেশ। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কয়েক বছরে সক্রিয় মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশের সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের মানুষ যোগাযোগ ও সম্প্রচার সুবিধার আওতায় এসেছে।

যত উন্নয়ন : ১. পদ্মা সেতু নির্মাণ, ২. সমুদ্রসীমানা বিজয়, ৩. শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, ৪. ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৫. জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, ৬. দারিদ্র্যের হার নিম্নপর্যায়ে, ৭. যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার, ৮. বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, ৯. বিনামূল্যে প্রত্যেকেটি শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণ, ১০. বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, ১১. কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, ১২. বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, ১৩. দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি, ১৪. মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, ১৫. গরিব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, ১৬. অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ব্যবস্থা, ১৭. রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১৮. মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী-ভাতা প্রদান, ১৯. প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্র, ২০. বিভিন্ন জেলায় বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, ২১. বিভিন্ন জেলায় শিল্প পার্ক নির্মাণ, ২২. দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনমিক জোন নির্মাণ, ২৩. গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও কালভার্ট নির্মাণ, ২৪. মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধি, ২৫. একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, ২৬. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ২৭. কৃষিতে সফলতা, ২৮. জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সফলতা, ২৯. এশিয়া হাইওয়ে রোড প্রকল্প, ৩০. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, ৩১. প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান, ৩২. নারীর ক্ষমতায়ন, ৩৩. বিধবা-ভাতা প্রদান, ৩৪. মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, ৩৫. বয়স্ক-ভাতা প্রদান, ৩৬. মাতৃকালীন ভাতা প্রদান, ৩৭. ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যকর, ৩৮. মেট্রোরেল, ৩৯. হাতির ঝিল প্রকল্প, ৪০. এলিভেটেড একপ্রেস প্রকল্পের কাজ চলছে, ৪১. সেটেলাইট, ৪২. ৪ জি-৫ জি, ৪৩. মাদক নিধন, ৪৪. ভিক্ষুকমুক্তকরণ, ৪৫. হরতালমুক্তকরণ, ৪৬. ২০০টি ওপরে মসজিদ স্থাপন, ৪৭. রূপপুরে পারোমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও ৪৮. প্রাইমারি স্কুল সরকারীকরণ।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়েছিল। অথচ স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, সম্পদে ভরপুর এবং সম্পদে উপচেপড়া ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, সাহসী, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের ফলে। আশির দশকে বাংলাদেশের গার্মেন্টশিল্পের বিকাশের মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের সূচনা হয়। কালক্রমে এই শিল্প এখন বিশ্বে অন্যতম প্রধান রফতানিকারক শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রবাসী আয় আজ বার্ষিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আজ আমরা শত্রুর মুখে চুনকালি দিয়ে বিশ্ব অগ্রগতির মহাসড়কে।

বাংলাদেশের অর্জন : ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্যদূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৭ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। সহগ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য।

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সব কটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ (১) এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লক্ষ্যে (২) উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং।

মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপযুক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবিলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদ-ে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে। আর সে কারণেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এই সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।

লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close