reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ নভেম্বর, ২০১৮

কোটিপতি হওয়া কত না সহজ

মাত্র তিন বছরে কোটিপতি। জনতা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জনতা ব্যাংকসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষায় জালিয়াতি করে মাত্র তিন বছরে ১০ কোটি টাকা মূল্যমান সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা দেশের নাম বাংলাদেশ। এ দেশে কত কিছুই না সম্ভব হয়েছে। পুলিশ বলেছে, হাফিজুরের নামে ১০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে, যা তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে অর্জন করেছেন।

এখানে বলতেই হয়, ‘বাসন্তীকে কী দোষ দেবÑবাসন্তী তো যুবতী মেয়ে’। আসলেই ওই কর্মকর্তাকে দোষ দিয়ে কী লাভ? তিনি তো দুর্নীতিতে শীর্ষে থাকা একটি দেশের নাগরিক। সেই দেশে ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষায় জালিয়াতি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হবেনÑএতে দোষটা কোথায়! দোষটা ব্যক্তির নয়, সমাজব্যবস্থার। সমাজব্যবস্থা আজ এমন এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে কারো পক্ষে দুর্নীতিমুক্ত হয়ে থাকা অনেকটা মহারণে সাধারণ সৈনিকের ভূমিকায় কমান্ড ফলো করার মতো। কমান্ড না মানলে পেছন থেকে গুলি। বুকটা ঝাঁজরা হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো গত্যন্তর নেই।

এ কাজে তিনি একাই যুক্ত নন। রয়েছে সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটে এমন সব গণ্যমান্য এবং দেশবরেণ্যরা যুক্ত আছেন বা থাকেন, যাদের এই অসুস্থ সমাজ স্পর্শ করতে পারে না। তারা সব সময়ই থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অসুস্থ সমাজের অসুস্থ প্রশাসন। তাদের এমন কোনো ক্ষমতা বা শক্তি থাকে না, যা দিয়ে এই অসুস্থ সমাজকে মেরামত করা যায়। অন্যভাবে বলা যায়, মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ দিয়ে অসুস্থ সমাজকে সুস্থ করে তোলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অনেক অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করার দেশ এখানে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশের মতে, এই চক্রটি পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক বা সহকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা দ্রুত সমাধানের পর ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ডিজিটাল ডিভাইস হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড আকৃতির খুদে মুঠোফোন, ব্লুটুথের মাধ্যমে যা যুক্ত থাকে এয়ার ফোনের সঙ্গে। এর মাধ্যমেই হলে বসে উত্তরপত্রের সমাধান পায় পরীক্ষার্থীরা।

গত ৮ আগস্ট এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য মতে, এই চারজন একেকটি চক্রের হোতা এবং অভিযুক্ত জ্যেষ্ঠ ব্যাংক কর্মকর্তা তাদের নেতা। গ্রেফতারের দশ দিনের মধ্যে চার চক্রের চারজনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের মতে, এই চক্রটি বিসিএস পরীক্ষায়ও একই কাজ করেছে। আমরা মনে করি, এর একটি নির্ভেজাল সমাধান হওয়া আজ সময়ের দাবি। এ দাবিকে উপেক্ষা করলে আগামীর যেকোনো সময়ে পুরো জাতিকে এর মাশুল দিতে হবে, যা দেশপ্রেমিক কোনো মানুষের প্রত্যাশা হতে পারে না। আমরা প্রকৃত অর্থেই এর একটি সুন্দর সমাধান চাই। আর এটাই জাতির প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close